বেসরকারি অংশগ্রহণে নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা-২০২৫ অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এই নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
এ নীতিমালা অনুমোদনের ফলে বেসরকারি খাতে সৌর জ্বালানিতে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিকেলে রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভসি একাডেমিতে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম বলেন, এ নীতিমালাটি বাস্তবায়িত হলে গ্রহণযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রয় করার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হবে। এতে দেশে রপ্তানিমুখী শিল্পসমূহ নবায়নযোগ্য ও পরিচ্ছন্ন জ্বালানি ব্যবহার করে পণ্য উৎপাদনের ফলে ইউরোপসহ বিশ্বরে অন্যান্য গন্তব্যে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। এছাড়া বেসরকারি খাতে মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের ফলে বিদ্যুৎ খাতে নতুন কর্মসংস্থান এবং বিভিন্ন আনুষাঙ্গিক বাণিজ্যিক সংযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা তৈরি হবে।
নীতিমালায় যা রয়েছে
এই নীতিমালার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের একজন উদ্যোক্তা নবায়নযোগ্য কোনো উৎস দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে রপ্তানিমুখী কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানে পারস্পরিক সম্মত মূল্যে বিদ্যুৎ বিক্রি বিক্রি করতে পারবে। এক্ষেত্রে সরকার নির্দিষ্ট ট্যারিফ চার্জের বিনিময়ে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ বিক্রেতা এবং ক্রেতাকে তার গ্রীড সঞ্চালন ও বিতরণ অবকাঠামো ব্যবহার করার সুযোগ প্রদান করবে।
প্রস্তাবিত নীতিমালাতে মোট নয়টি অধ্যায় ও দুটি পরিশিষ্ট রয়েছে। প্রথম অধ্যায়ে সংলাপসমূহ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বা মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের অনুশীলনী পদ্ধতি এবং শর্তাবলী রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি নীতি হচ্ছে সরকারি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা তার চাহিদা ও সক্ষমতা সাপেক্ষ মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট থেকে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ বিদ্যুৎ ক্রয় করতে পারবে।
নীতিমালার তৃতীয় অংশে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন সংক্রান্ত নীতিসমূহ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে সম্ভাব্য স্বার্থের সংঘাত এড়াতে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন সরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ কোম্পানড়িগুলোকে মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট (এমপিপি) স্থাপন করা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি অন্য সব রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান/কোম্পানিসমূহকে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের সুযোগের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত নীতিমালার পঞ্চম অধ্যায়ের আওতায় মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনকারী বিনিয়োগকারীদের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের কাছে আর্থিক দায় আছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঋণ খেলাপি ঘোষিত কোনো ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান মার্চেন্ট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবেন না মর্মে প্রস্তাব করা হয়েছে।
এমইউ/এমএমকে/জেআইএম