স্তন ক্যানসার থেকে সেরে ওঠা মানে জীবনের দ্বিতীয় সুযোগ পাওয়া। চিকিৎসার পর অনেক নারী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান। তবে সুস্থ হওয়ার পাঁচ-সাত বছর পর এ রোগ আবারও ফিরে আসতে পারে।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে মেটাস্ট্যাটিক ডেভেলপমেন্ট বলা হয়। আমেরিকান ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটেরে এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২০ শতাংশ নারী চিকিৎসার ৫ বছরের মধ্যে ক্যানসার পুনরাবৃত্তির মুখোমুখি হন। মূলত হরমোন রিসেপ্টর পজিটিভ ক্যানসার (যা ইস্ট্রোজেন নির্ভর) রোগীদের ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কেন ক্যানসার ফিরে আসতে পারে, এর লক্ষণ ও কীভাবে প্রতিরোধ করবেন-
স্তন ক্যানসার কেন ফিরে আসে
- ১. ক্যানসারের ধরন ও স্টেজ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যানসার প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা এবং সঠিক চিকিৎসা নেওয়া হলে আবার ফিরে আসার আশঙ্কা কম থাকে। তবে যদি ক্যানসারটি আক্রমণাত্মক হয় বা দেরিতে শনাক্ত হয়, তাহলে ফিরে আসার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- ২. চিকিৎসার (যেমন সার্জারি, কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি) পরেও কিছু ক্যানসারের কোষ শরীরের মধ্যে থেকে যেতে পারে, যা প্রচলিত পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে না। এই কোষগুলো অনেক বছর পর পুনরায় সক্রিয় হয়ে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে।
- ৩. ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, জীবনযাত্রার ধরনের কারণে পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
স্তন ক্যানসার ফিরে আসার লক্ষণগুলো হলো-
১. স্তনে ব্যথা
হঠাৎ যদি স্তনে ব্যথা অনুভব করেন, তা অবহেলা করবেন না। ক্যানসার ফিরে আসার একটি লক্ষণ এটি। বুক, পিঠ, পাঁজরের হাড়ের ভেতর তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা হতে পারে।
২. স্তনের আকার পরিবর্তন
স্তনের আকারে হঠাৎ যদি কোনও পরিবর্তন চোখে পড়ে। নিজের হাতের স্পর্শে বুঝতে হবে, স্তনের মধ্যে কোনো ফোলা ভাব রয়েছে কি না। যদি তেমন হয়, তা হলে বুঝতে হবে, ক্যানসার ফিরে আসছে।
৩. নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট
ঠান্ডা লাগার সমস্যা না থাকার পরেও যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে চাপ ধরে, তাহলে সতর্ক থাকতে হবে। স্তন ক্যানসার সেরে ওঠার পর তা সহজেই ফুসফুসে ছড়িয়ে যেতে পারে।
৪. দুর্বলতা
ক্যানসারের মতো রোগের সঙ্গে লড়াই করে অনেকে দূর্বল হয়ে পড়ে। এজন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। যদি বিশ্রাম নেওয়ার পরেও ক্লান্তি না কাটে, দুর্বল লাগে, তাহলে তা স্বাভাবিক নয়। এটি ক্যানসার ফিরে আসার লক্ষণ হতে পারে।
৫. স্নায়ুজনিত সমস্যা
স্তন ক্যানসার কিন্তু মস্তিষ্ক পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্নায়ুজনিত সমস্যা হতে পারে। কোনো ঘটনা ভুলে যাওয়া, মাথা যন্ত্রণা করা, দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ক্যানসার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা থাকলেও সচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
১. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি, শস্যদানা এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন খেতে হবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয় এবং লাল মাংস সীমিত রাখতে হবে।
২. নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করা
হালকা হাঁটা, যোগব্যায়াম বা সাঁতার ক্যানসার পুনরাবৃত্তির ঝুঁকি অনেক কমায়। বিশেষজ্ঞরা সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের ব্যায়ামের (যেমন - দ্রুত হাঁটা) পরামর্শ দেন। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং কোষের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
৩. নিয়মিত ফলো-আপে থাকা
ক্যানসারমুক্তি মানেই চিকিৎসা শেষ নয়। নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে ফলো-আপ ভিজিট করুন। প্রয়োজন অনুযায়ী ম্যামোগ্রাম, আল্ট্রাসনোগ্রাম বা রক্ত পরীক্ষা করান। শরীরে নতুন কোনো পরিবর্তন, ব্যথা বা অস্বাভাবিকতা টের পেলে দেরি না করে চিকিৎসককে জানাতে হবে ।
৪. ক্ষতিকর অভ্যাস থেকে দূরে থাকা
ধূমপান ও মদ্যপান ক্যানসার কোষের পুনর্জন্মের ঝুঁকি বাড়ায়। এগুলো একেবারেই বাদ দিতে হবে। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিতে হবে।
৪. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা
রাত জাগা বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন ও ইয়োগা জাতীয় কার্যক্রম অনুশীলন করতে হবে।
সূত্র: হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ, ক্লিনিকাল ক্যানসার রিসার্চ জার্নাল, আমেরিকান ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট, হেলথলাইন ও অন্যান্য
আরও পড়ুন
স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাবে এই পানীয়
হার্ট সুস্থ রাখতে পুষ্টিবিদের পরামর্শে ডায়েট তৈরি করুন
এসএকেওয়াই/এএমপি/জিকেএস