নিজের স্ত্রী ব্রিজিত ম্যাক্রোঁ যে নারী, তা প্রমাণে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও নথি উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। ডানপন্থি মার্কিন ইনফ্লুয়েন্সার ক্যান্ডেস ওয়েন্সের বিরুদ্ধে দায়ের করা মানহানির মামলায় এসব প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে।
ওয়েন্স দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছেন, ব্রিজিত আসলে পুরুষ হিসেবে জন্মেছিলেন। এ অভিযোগকে ‘অত্যন্ত মর্মাহত ও অপমানজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন ব্রিজিত। তাদের আইনজীবী টম ক্লেয়ার জানান, আদালতে এমন বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য ও প্রমাণ হাজির করা হবে, যা নিঃসন্দেহে অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করবে।
বিবিসির ফেম আন্ডার ফায়ার পডকাস্টে ক্লেয়ার বলেন, পরিবারকে নিয়ে এমন আক্রমণ যে কারও জন্যই কষ্টদায়ক। প্রেসিডেন্ট হলেও এর বাইরে নন ম্যাক্রোঁ। তিনি আরও বলেন, যদিও প্রমাণ প্রকাশ্যে আনা ব্রিজিতের জন্য অস্বস্তিকর, তবু সত্য প্রতিষ্ঠায় তিনি সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
আইনজীবী জানান, ব্রিজিতের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থার ছবি ও সন্তানদের লালন-পালনের নথি আদালতে উপস্থাপন করা হবে। তবে আদালতের নির্ধারিত নিয়ম মেনেই এসব উপস্থাপন করা হবে।
ওয়েন্স, যিনি আগে মার্কিন রক্ষণশীল সংবাদমাধ্যম ডেইলি ওয়্যারের ভাষ্যকার ছিলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাখো অনুসারীর কাছে ব্রিজিত নিয়ে এই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। ২০২৪ সালের মার্চে তিনি প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, এই অভিযোগের পক্ষে তিনি নিজের ‘পুরো পেশাগত সুনাম বাজি রাখতে’ প্রস্তুত।
অভিযোগটির সূত্রপাত হয়েছিল ২০২১ সালে ফরাসি দুই ব্লগার আমানদিন রয় ও নাতাশা রের একটি ইউটিউব ভিডিও থেকে। তাদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সে মানহানির মামলা করে প্রথমে জয়ী হয়েছিলেন ম্যাক্রোঁ দম্পতি। তবে ২০২৫ সালে আপিল আদালত মত প্রকাশের স্বাধীনতার যুক্তিতে সেই রায় বাতিল করে। বর্তমানে ম্যাক্রোঁ দম্পতি আবারও এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়ছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ক্যান্ডেস ওয়েন্সের বিরুদ্ধে মামলা করেন ম্যাক্রোঁ দম্পতি। মামলায় বলা হয়, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছেন ও পরিচিত ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়ানো ব্যক্তিদের বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
তবে প্রতিক্রিয়ায় ওয়েন্সের আইনজীবীরা মামলাটি খারিজ করার আবেদন জানিয়েছেন। তাদের দাবি, ডেলাওয়্যারে এ মামলা চলতে পারে না, কারণ এটি তার ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এ কারণে তাকে সেখানে মামলার জবাবদিহি করতে বাধ্য করা ‘অর্থনৈতিক ও কার্যক্রমগত ক্ষতি’ ডেকে আনবে।
আগস্টে ফরাসি ম্যাগাজিন প্যারিস ম্যাচকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ বলেন, এটা আমার সম্মান রক্ষার প্রশ্ন। তিনি জানতেন অভিযোগটি মিথ্যা। তবু একটি মতাদর্শ ও উগ্র ডানপন্থি রাজনীতির স্বার্থে এ অপপ্রচার চালিয়েছেন।
বিবিসি ক্যান্ডেস ওয়েন্সের আইনি দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তবে এর আগে তিনি প্রকাশ্যে বলেন, তার বক্তব্য সত্য বলে তিনি বিশ্বাস করেন এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার চেয়ে বেশি আমেরিকান মূল্যবোধ আর কিছু হতে পারে না।
সূত্র: বিবিসি
এসএএইচ