উন্নত জীবনের আশায় অনেকেই নিজ দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান বিদেশে। অনেকেই আবার দারিদ্র্যকে জয় করার স্বপ্ন নিয়ে দেশ ছাড়েন। অনেকে মনে করেন ইউরোপে গেলেই ভাগ্য ফিরবে। বৈধ পথে নানা জটিলতা ও আর্থিক দৈন্যতার জন্য অবৈধ পথকেই বেছে নেন বেশিরভাগ মানুষ। এজন্য অনেকেই দালালের খপ্পরে পড়ে বিপজ্জনক পথে পা বাড়ান।
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ও বিভিন্ন দেশের ঝুঁকিপূর্ণ সীমানা পাড়ি দিয়ে বিদেশে যাত্রার সময় অসংখ্য মানুষ জীবন হারাচ্ছেন, নিখোঁজও হচ্ছেন বহু মানুষ। কঠোর আইন, জীবনের ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা এসব বিপত্তি জেনেও অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়া ঠেকানো যাচ্ছে না কিছুতেই। ফলে এ যাত্রা যেন হয়ে উঠছে মৃত্যুফাঁদ।
প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ এশিয়া ও আফ্রিকা থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করেন। এক্ষেত্রে বেশিরভাগের গন্তব্য থাকে স্পেন, ইতালি কিংবা গ্রিসের উপকূল। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশীও এ পথ বেছে নেন। আবার আটলান্টিক মহাসাগর পথকেও বেছে নেন অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। ছোটো ছোটো নৌকায় ঝুকিপূর্ণ এসব সমুদ্রপথ পাড়ি দিতে গিয়ে প্রায় সময়ই দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। গণমাধ্যমে এসব দুর্ঘটনার খবর আমরা প্রতিনিয়তই দেখি।
অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইউরোপ যাত্রায় প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন অথবা নিখোঁজ হচ্ছেন। ২০২৪ সালেও বিশ্বে সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী নিখোঁজ হয়েছে স্পেনে যেতে গিয়ে। এ বছর ১০ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী মারা গেছেন বা নিখোঁজ হয়েছেন স্পেন পৌঁছাতে গিয়ে। একইসঙ্গে স্পেনে পৌঁছেছে ৫৭ হাজারেরও বেশি অভিবাসী।
এক বিবৃতিতে স্পেনভিত্তিক অভিবাসী অধিকার বিষয়ক সংস্থা কামিনদাদো ফ্রন্তেরাস জানায়, এ সংখ্যা ১০ হাজার ৫৪৭ জনে পৌঁছেছে। দিনে গড়ে ৩০ জন করে মারা যাচ্ছেন। মৃতদের মধ্যে অন্তত ৪২১ নারী ও এক হাজার ৫৩৮ শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক রয়েছে। ২০২৩ সালে গড়ে প্রতিদিন এভাবে মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের। কামিনদাদো ফ্রন্তেরাস অর্থ ‘পায়ে হাঁটা সীমান্ত’৷ এই সংস্থার মতে, ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর এই সংখ্যাটি ৫০ শতাংশেরও বেশি।
কামিনদাদো ফ্রন্তেরাস সাগরে নৌকাডুবি ও অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মৃত্যুর বিষয়ে বলেছে, ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিকে উদ্ধারের দায়িত্ব ও মানুষের ‘বাঁচার অধিকারের’ বদলে অভিবাসী নিয়ন্ত্রণের দিকটি বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা, হেলেনা মালেনো এক বিবৃতিতে বলেন, এ সংখ্যাগুলো উদ্ধার ও সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলোর গভীর ব্যর্থতাকে তুলে ধরে। ১০ হাজার চারশজনেরও বেশি মানুষ এক বছরে নিখোঁজ হয়েছেন, এই ট্র্যাজেডি মেনে নেওয়া যায় না।
সাগরপথে স্পেনে পাড়ি দেওয়ার যতগুলো পথ রয়েছে, তার মধ্যে আটলান্টিক সাগরপথকে সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে উল্লেখ করেছে কামিনদাদো ফ্রন্তেরাস। এই পথে এ বছর মারা গেছেন ৯ হাজার ৭৫৭ জন। মৌরিতানিয়া থেকে স্পেনের ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে আসার পথেও বেড়েছে মৃত্যু। বিপজ্জনক পথের তালিকায় আছে আলজেরিয়া থেকে আসা ভূমধ্যসাগরের পথটিও, যেখানে প্রাণ হারান ৫১৭ জন।
স্পেনের স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতে, এ বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত নৌকায় চেপে ৫৭ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী স্পেনে এসে পৌঁছেছেন। সংখ্যাটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগ অভিবাসনপ্রত্যাশীই এসেছেন আটলান্টিক হয়ে।