স্বাস্থ্যখাতে চাহিদার চেয়ে বাজেট কম, দেশে বাড়ছে অসংক্রামক রোগ
চাহিদার চেয়ে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বাজেট খুবই কম। এত কম বাজেট বিশ্বের কোনো দেশে নেই। এমনকি বাংলাদেশে আফগানিস্তানের চেয়েও কম। দেশের জনগণের কথা ভেবে আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দাবি করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগ। তবে এ খাতে অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪.২ শতাংশ, যা খুবই অপ্রতুল। দেশে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্য পরিপূরণ করতে হলে স্বাস্থ্যখাতের প্রতি আরও গুরুত্ব দেওয়া জরুরি।
মঙ্গলবার ও বুধবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর বিএমএ ভবনে ‘উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং করণীয়’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সাংবাদিক কর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়। এ কর্মশালায় এ দাবি জানানো হয়।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা এ কর্মশালার আয়োজন করে। কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত ২৬ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।
স্বাস্থ্যখাতে রাজনীতি, স্বাস্থ্যখাতে বাণিজ্য, স্বাস্থ্যখাতে বাজেট ও অসংক্রামক রোগের প্রতিকার, বিনামূল্যে রোগের ওষুধ প্রদানসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয় কর্মশালায়।
স্বাস্থ্যখাতে রাজনীতি ও বাণিজ্য বন্ধ করা গেলে চিকিৎসা সেবায় মানুষের ভোগান্তি কমবে এবং স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়বে। এজন্য দেশের রাজনীতিবিদদের সৎ ইচ্ছার অভাব একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন খাতে মোটাদাগে বাজেট বরাদ্দ রাখা হলেও স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শহরের তুলনায় তৃণমূলে মানুষ বিভিন্ন রোগের বিষয়ে সচেতন না। তাই সরকারকে বিভিন্ন সচেতনমূলক কর্মসূচির নেওয়ার আহ্বান করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
কর্মশালায় জানানো হয়, বর্তমানে দেশের জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে, যা বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ। উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ মোকাবিলায় এরই মধ্যে তৃণমূল পর্যায়ে বিনামূল্যে এ রোগের ওষুধ প্রদানের কাজ শুরু হলেও উদ্বেগজনক এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করা জরুরি এবং এজন্য টেকসই অর্থায়ন প্রয়োজন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার অংশ হিসেবে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হলেও এ খাতে অর্থ বরাদ্দ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারে সাফল্য দেখাতে পারেনি। প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় ওষুধের সরবরাহ নিয়মিত রাখার বিষয়টিকেও প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
কর্মশালায় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. এনামুল হক বলেন, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বরাদ্দকৃত বাজেটের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা জরুরি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতা বাড়ানো, স্ক্রিনিং কার্যক্রম জোরদার করা এবং সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য বাজেট বাড়ানো অনিবার্য।
জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রূহুল কুদ্দুস বলেন, সব কমিউনিটি ক্লিনিক ও উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিশ্চিত করার মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব।
কর্মশালায় আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের প্রোগ্রাম ম্যানেজার (উপসচিব) ডা. মোহাম্মদ শওকত হোসেন খান, কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. গীতা রানী দেবী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. মারুফ হক খান, বাংলাদেশ ফার্স্ট পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মোর্শেদ নোমান, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডেপুটি রিসার্চ কোঅর্ডিনেটর ডা. তন্ময় সরকার এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক উপস্থাপনা তুলে ধরেন প্রজ্ঞার পরিচালক মো. শাহেদুল আলম এবং কোঅর্ডিনেটর সাদিয়া গালিবা প্রভা।