স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার দখলে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স

1 month ago 21

বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানার্থে নির্মিত কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মার্কেট দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোস্তফা কামাল মামুনের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে দোল্লাই নোয়াবপুর বাজারে অবস্থিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের পর  দীর্ঘ ৬ বছর ধরে পড়ে আছে। তালিকাভুক্ত পাঁচ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা থাকলেও কারো আনাগোনা নেই সেখানে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ১ম ও ২য় তলার মোট ১২টি দোকান বরাদ্দের ঘোষণা হলে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ৪টি দোকান ঘর নিজের পরিবারের সদস্যদের নামে দখলে নেয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সদস্য মোস্তফা কামাল মামুন। এর মধ্যে একটি দোকান নিজের ব্যক্তিগত অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন তিনি।

অপরদিকে, আওয়ামী সরকারের প্রভাব বিস্তার করে উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সাধারণ সম্পাদক জালাল মেম্বার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দুটি দোকান দখলে নিয়ে নিজের ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এ ছাড়াও উপজেলা কৃষক লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক আশেকে এলাহী ও কেগলা গ্রামের ওয়ার্ড সদস্য জালাল হোসেন একটি করে দোকান ঘর দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে দোল্লাই নোয়াবপুর বাজারে ওই ভবনটি নির্মাণ করে তৎকালীন সরকার। ২০১৮ সালের অক্টোবরে ভবনটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত তিন তলা ভবনে রয়েছে সভাকক্ষ, পাঠকক্ষ, উপজেলা কমান্ডারের অফিস কক্ষ এবং বরাদ্দের জন্য রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভবনের দোকান ভাড়ার আয় থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটানো, রক্ষণাবেক্ষণ, একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্যও সঞ্চয় করার কথা থাকলেও ৬ বছর পার হলেও ভবনটিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয় না। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বীর মুক্তিযোদ্ধারা অভিযোগ করেন, উপজেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজি আব্দুল মালেক আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবেই জড়িয়ে ছিলেন। তিনি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ব্যবহার না করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয় সংলগ্ন ভবনে একটি রুম নিয়ে অফিস দাবি করে কার্যক্রম চালাতেন। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। তার যোগসাজশে আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে আছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। আওয়ামী লীগ নেতারা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের দোকান ঘর অফিস বানিয়ে চান্দিনা দক্ষিণ অঞ্চলের রাজনীতি পরিচালনা করতেন।

অভিযুক্ত মোস্তফা কামাল মামুন ও জালাল মেম্বার জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দুই বছরের জন্য দোকান ঘর বরাদ্দ নিয়েছেন ব্যবসায়ীক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য। দীর্ঘদিন মাসিক ভাড়া দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশে দোকান ঘর দখলে নিয়ে ব্যবহার বিষয়টি মিথ্যা জানিয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেন তারা।

সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাজি আব্দুল মালেক জানান, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মামুন আমাদের অফিসের আসবাবপত্র নিয়ে গেছেন। আমরা রেজুলেশন করে উপজেলা পরিষদে একটি অফিস ব্যবহার করছি। আর সরকারি প্রোগ্রামগুলোতে সংসদ সদস্য ডা. প্রান গোপাল দত্তের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতাম।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাজিয়া হোসেন বলেন, দোকানগুলো সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে বরাদ্দের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। কেউ যদি নিয়ম বহির্ভূত কাজ করে থাকে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে দোকান বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

Read Entire Article