দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ এর র্যালি নিয়ে অসন্তোষ, অনুষ্ঠান বয়কট ও বই বিতরণের পর ভুলের কারণে ফেরত নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে জুলাই যোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা চান জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ উদযাপনে এমন হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ৫ আগস্ট মঙ্গলবার জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস-২০২৫ উপলক্ষে সকাল ৯টায় পুস্পস্তবক অর্পণ, ৯টা ১৫ মিনিটে জুলাই গণঅভ্যুত্থান র্যালি, সকাল দশটায় শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা, জুলাই শহীদ পরিবার, আহত, কারা নির্যাতিত এবং সম্মুখ যোদ্ধাদের মিলনমেলা, সম্মাননা প্রদান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তবে যাদের নিয়ে এই আয়োজন তাদের মধ্যে দেখা দেয় অসন্তোষ।
প্রথমে ৯টা ১৫ মিনিটে জুলাই গণঅভ্যুত্থান র্যালি নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের ছাড়াই পুস্পস্তবক অর্পণ করেন জেলা প্রশাসক। এ নিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা এসময় গোর-এ শহীদ ময়দানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়ে অনুষ্ঠান বয়কটের ঘোষণা দিয়ে স্লোগান দেন। পরে জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম জানতে পেরে সেখানে গিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদেরকে অনুষ্ঠানে নিয়ে যান।
আবার বিকেলে জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম পূর্ব ঘোষণার বাইরে গিয়ে দিনাজপুর জিমনেসিয়াম মাঠে স্থাপিত মূল ‘জুলাই স্মৃতিস্তম্ভ’ বাদ দিয়ে জজকোর্ট চত্বরে অবস্থিত একটি ভিন্ন স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। সেখানে শুধুমাত্র প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আহত ২৫৩ জন জুলাই যোদ্ধা এবং আটটি শহীদ পরিবারের কেউই এসময় উপস্থিত ছিলেন না।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওইসব যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা দিনাজপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন এবং এক ঘণ্টার কর্মসূচি পালন করেন। তাদের অভিযোগ, তাদের উপেক্ষা করে যারা অনুষ্ঠান করেন, তাদের সঙ্গে অংশগ্রহণের প্রয়োজন নেই।
জুলাই যোদ্ধাদের একজন বলেন, আমাদের বাদ দিয়ে যারা প্রোগ্রাম করে, তাদের সঙ্গে আমাদের যাওয়ার দরকার নাই। এটা শহীদদের অপমান।
পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম এবং পুলিশ সুপার মারুফাত হোসেন শহীদ মিনারে ছুটে যান। সেখানে জেলা প্রশাসক অনুতপ্ত মনোভাব প্রকাশ করেন এবং ক্ষমা চান জুলাই যোদ্ধাদের কাছে। পরে তিনি তাদের সঙ্গে নিয়ে শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
জুলাই যোদ্ধারা জানান, এ দিনটি শুধু প্রশাসনের আনুষ্ঠানিকতা নয় বরং শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতির দিন। এ ধরনের অবজ্ঞা তারা মেনে নেবেন না।
এদিকে গণঅধিকার পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখা জেলা প্রশাসনের সকল অনুষ্ঠান বয়কট করেন। গণঅধিকার পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম আজম বলেন, জেলা প্রশাসক একটি নিবন্ধনবিহীন রাজনৈতিক দলের প্রেসক্রিপসনে চলেন। তিনি গণঅধিকার পরিষদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছেন। কোনো অনুষ্ঠান বা মাসিক মিটিংয়েও ডাকেন না। জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫ অনুষ্ঠানে সেই নিবন্ধনবিহীন রাজনৈতিক দলের প্রেসক্রিপসনে রাত ১১টায় দাওয়াতপত্র পাঠানো হয়। তাই আমরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস ২০২৫ অনুষ্ঠান বয়কট করেছি। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
তারা আরও বলেন, মেরুদণ্ডহীন এই জেলা প্রশাসককে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনও সম্ভব নয়।
অপরদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস- ২০২৫ উপলক্ষে দিনাজপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল দশটায় শিশু একাডেমি মিলনায়তনে আলোচনা সভা শেষে জুলাই শহীদের পরিবার, আহত, কারা নির্যাতিত এবং সম্মুখ যোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও পুরস্কার বিতরণী করা হয়। এসময় উপহার সামগ্রীর সঙ্গে দিনাজপুর জেলা পরিষদের বাস্তবায়নে ‘৩৬ জুলাই-২০২৪ দিনাজপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের বীরত্বগাঁথা স্মারকগ্রন্থ’ নামে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে বিতরণ করা হয়। বই হাতে পেয়ে জুলাই যোদ্ধা নয় এমন ব্যক্তির ছবি দেখে প্রকৃত জুলাই যোদ্ধারা হৈচৈ শুরু করেন। এসময় জেলা প্রশাসক অনুরোধ করে বইগুলো ফেরত চান। পরে সবাই বইগুলো ফেরত দিয়ে দেন।
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হৈচৈ পড়ে যায়। বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করেন। তারা বলেন, দিনাজপুরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলামকে মোবাইলে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
এমদাদুল হক মিলন/এফএ/জেআইএম