হজরত আলির (রা.) স্মৃতির মসজিদ

2 hours ago 5
প্রিয় নবীজির চাচাতো ভাই, কন্যা ফাতিমার স্বামী, ইসলামের তৃতীয় খলিফা হজরত আলি (রা.)-এর স্মৃতির শহর বর্তমান ইরাকের কুফা নগরী। দ্বিতীয় খলিফা হজরত উসমান (রা.)-এর হত্যার বিচার নিয়ে যখন মুসলিমরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে এবং রাসুলের শহর মদিনায় যুদ্ধ ও রক্তপাত শুরু হয়, তখন রাসুলের শহরের পবিত্রতা বজায় রাখার লক্ষ্যে তিনি রাজধানী সরিয়ে নিয়ে যান কুফা নগরীতে। সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে তার স্মৃতিবিজড়িত একটি মসজিদ। মসজিদটি পরিচিত ‘মাসজিদ আল-কুফা’ বা ‘মসজিদ আল-আজম’ নামে। এটি ইরাকের কুফায় অবস্থিত বিশ্বের পুরোনো মসজিদগুলোর অন্যতম। এক বর্ণনায় এসেছে, মক্কার মসজিদুল হারাম, মদিনার মসজিদে নববী ও ফিলিস্তিনের আল-আকসার পর মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ হচ্ছে এই কুফা মসজিদ। অনেকে মসজিদুল আকসার চেয়েও এই মসজিদের মর্যাদা বেশি বলে উল্লেখ করেছেন। কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী, আদি পিতা হজরত আদম (আ.) সর্বপ্রথম বিশাল আয়তনের এ মসজিদ নির্মাণ করেন। মহাপ্লাবনের পর হজরত নুহ (আ.) মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করেন। ১৭ হিজরিতে মুসলিম সেনাবাহিনী যখন বর্তমান ইরান ও ইরাকের সীমান্তে অবস্থান করছিল, তখন তৎকালীন খলিফার পক্ষ থেকে হজরত সালমান ফারসি (রা.) ও খুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.)কে সেনাবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থান খোঁজার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা দুজন খুঁজে খুঁজে কুফা এলাকাকে এ কাজের জন্য উপযুক্ত মনে করেন। এ কারণে তারা দুই রাকাত শুকরানা নামাজ আদায় করেন। মুসলিম বাহিনী এখানে সর্বপ্রথম যে স্থাপনা নির্মাণ করেন, সেটি ছিল কুফা মসজিদ। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এ মসজিদ মুসলিম বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত হয়। ৩৬ হিজরিতে হজরত আলি (রা.) কুফা নগরীতে প্রবেশ করেই এ মসজিদে যান এবং সেখানে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে ভাষণ দেন। কুফা মসজিদের একেকটি স্থানের নাম একেকজন নবী-রাসুলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ স্থানগুলোকে বলা হয় মাকাম। মসজিদের যে স্থানে দাঁড়িয়ে হজরত আলি (রা.) নামাজ আদায় করতেন, তা মুসলমানদের কাছে, বিশেষ করে আহলে বাইতের অনুসারীদের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত স্থান। এখানেই ইবনে মুলজাম নামক পাপিষ্ঠ খারেজি হজরত আলি (রা.)-এর মাথায় বিষ মাখানো তরবারি দিয়ে আঘাত করেছিল। কুফা মসজিদের একটি অংশের নাম দিক্কাতুল কাজা। এখানে বসে হজরত আলি (রা.) বিচারকাজ পরিচালনা করতেন। এখানে রয়েছে নাতিদীর্ঘ একটি স্তম্ভ, যাতে পবিত্র কেরআনের সুরা নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতের একাংশ লেখা আছে, যার অর্থ হলো—‘আল্লাহ ন্যায়পরায়ণতা, সদাচরণ ও আত্মীয়স্বজনকে দান করার আদেশ দেন এবং তিনি অশ্লীলতা, অসংগত কাজ ও অবাধ্যতা করতে বারণ করেন। তিনি তোমাদের উপদেশ দেন যাতে তোমরা স্মরণ রাখো।’ মসজিদটির সপ্তম স্তম্ভের নাম হজরত আদম (আ.)। এটি হচ্ছে সেই জায়গা, যেখানে মহান আল্লাহ হজরত আদম (আ.)-এর তওবা কবুল করেছিলেন। হজরত আলি (রা.) এ স্তম্ভের কাছে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তেন বলে এ স্তম্ভকে আমিরুল মুমিনিন (রা.) স্তম্ভও বলা হয়। কুফা মসজিদের একটি স্তম্ভ হজরত জিবরাইল (আ.)-এর নামে নামকরণ করা হয়েছে। মেরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় যাচ্ছিলেন, তখন কুফা এলাকায় পৌঁছলে জিবরাইল আমিন রাসুলুল্লাহ (সা.)কে বলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি এখন কুফা মসজিদের কাছে অবস্থান করছেন’—এ কথা শোনার পর রাসুলুল্লাহ (সা.) মহান আল্লাহর অনুমতি নিয়ে এখানে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেন। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে তিনি নামাজ আদায় করেছিলেন, সে স্থানটি বর্তমানে মাকামে জিবরাইল নামে পরিচিত। বর্তমানে মসজিদের আয়তন প্রায় ১১ হাজার মিটার। মসজিদে নয়টি কক্ষ, চারটি মিনার এবং পাঁচটি গেট রয়েছে। এটি সোনা, রৌপ্য ও বহু মূল্যবান পাথর যেমন হীরা, রুবি ইত্যাদি দিয়ে সাজানো হয়েছে। যে মিহরাবে হজর আলি (রা.) শহীদ হয়েছিলেন, তা সোনার জারি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশে কোরআনের আয়াত দ্বারা পরিবেষ্টিত করা হয়েছে, যাতে সোনার অক্ষরে আরবি চারুলিপি রয়েছে। কেবলার অংশে মার্বেলের ওপর অশ্রুর গড়নে খোদাই করা। পুরো মসজিদে ব্যবহৃত মার্বেল ও টাইলস গ্রিস থেকে আমদানি করা হয়েছে। এ টাইলসগুলো মক্কার কাবাতেও ব্যবহার করতে দেখা যায়। টাইলসগুলো গ্রীষ্মের সময়েও ঠান্ডা থাকে। লেখক: মাদ্রাসা শিক্ষক
Read Entire Article