হঠাৎ আলোচনায় জাপানের এক যুবরাজ, হতে যাচ্ছেন পরবর্তী সম্রাট!
জাপানের রাজপরিবারে চলছে উৎসবের আবহ। ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচিত প্রিন্স হিসাহাতো সদ্যই উনিশ বছরে পা দিয়েছেন। বয়সের দিক থেকে তিনি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রাপ্তবয়স্ক। প্রায় চার দশক পর আবারও প্রাপ্তবয়স্ক এক রাজপুত্র পেল জাপানের সম্রাট পরিবার। আর এ কারণেই দেশজুড়ে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছেন যুবরাজ হিসাহাতো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হিসাহাতো কেবল রাজপরিবারের ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারীই নন, বরং তিনি হতে পারেন জাপানের সম্ভাব্য শেষ সম্রাটও। তাই তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে।
ঐতিহাসিক তাৎপর্য
জাপানের ইতিহাসে রাজপরিবারের পুরুষ উত্তরাধিকারীর সংখ্যা সবসময়ই সীমিত। সর্বশেষ ১৯৮৫ সালে কোনো প্রিন্সের প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনুষ্ঠান উদযাপন করা হয়েছিল। তখনকার সেই তরুণ ছিলেন বর্তমান যুবরাজের বাবা প্রিন্স আকিশিনো।
আকিশিনোর ভাই, সম্রাট নিরুহিতো বর্তমানে সিংহাসনে রয়েছেন। কিন্তু তার কোনো পুত্রসন্তান নেই। ফলে সিংহাসনের উত্তরাধিকারের কাতারে এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছেন যুবরাজ হিসাহাতো।
পরিবার ও ব্যক্তিজীবন
হিসাহাতোর দুই বড় বোন আছেন—প্রিন্সেস কাকো এবং সাবেক প্রিন্সেস মাকো। তবে মাকো এক সাধারণ নাগরিককে বিয়ে করায় জাপানি রাজপরিবারের নিয়ম অনুযায়ী তার রাজকীয় মর্যাদা হারিয়ে যায়।
অন্যদিকে যুবরাজ হিসাহাতোর পরিচিতি শুধু উত্তরাধিকারীর কারণেই নয়, বরং ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণেও। তিনি জীববিজ্ঞানে পড়াশোনা করছেন এবং বিশেষ করে পোকামাকড় নিয়ে তার গভীর অনুরাগ রয়েছে। ফড়িং তার প্রিয়। এ কারণেই গণমাধ্যম তাকে ডাকে ‘ড্রাগনফ্লাই প্রিন্স’ নামে।
গত মার্চে প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে তিনি নিজেই জানান, ভবিষ্যতে ফড়িংসহ বিভিন্ন পোকামাকড় নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে চান। শহুরে এলাকায় কীভাবে পোকামাকড় সংরক্ষণ করা যায়, সেটিই তার অন্যতম গবেষণার আগ্রহের বিষয়।
উত্তরাধিকার নিয়ে বিতর্ক
জাপানের রাজতন্ত্রে দীর্ঘদিন ধরে পুরুষ উত্তরাধিকারী প্রথা চালু আছে। তবে পরিবারে পুরুষ সদস্য কমে যাওয়ায় ২০০৫ সালে সরকার প্রস্তাব দেয়, নারীরাও যেন সিংহাসনের উত্তরাধিকার হতে পারেন। কিন্তু পরের বছর হিসাহাতোর জন্ম হলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সেই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রবল বিরোধিতা।
এরপর ২০২২ সালে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল সুপারিশ করে, পুরুষ উত্তরাধিকার প্রথা বজায় রাখার পক্ষে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে শর্ত রাখা হয়, বিয়ের পরও তারা যেন রাজপরিবারের মর্যাদা ও আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
যদিও বিতর্ক এখানেই শেষ হয়নি। প্রশ্ন থেকে গেছে—রাজকন্যাদের স্বামী বা তাদের সন্তানদের কি রাজকীয় মর্যাদা দেওয়া হবে? এই ইস্যু এখনো ঝুলে আছে। তবে আপাতত সেসব আলোচনা থেমে গিয়ে রাজপরিবারের নজর পড়েছে যুবরাজ হিসাহাতোর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অনুষ্ঠানকে ঘিরে।
সম্ভাবনার কেন্দ্রে যুবরাজ
জাপানের ভবিষ্যৎ রাজতন্ত্র কোন পথে যাবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে হিসাহাতোর ওপর। উত্তরাধিকারীর স্বল্পতার কারণে তার প্রাপ্তবয়স্ক হওয়াকে রাজপরিবার একটি বড় মাইলফলক হিসেবে দেখছে। এখন তাকে নিয়েই নতুন করে স্বপ্ন দেখছে দেশটির রাজতন্ত্র, যদিও সমালোচকরা বলছেন—এটাই হয়তো জাপানি সম্রাট ব্যবস্থার শেষ প্রজন্ম হতে পারে।
সূত্র : সিএনএন