যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (ইউএসএআইডি) দুই হাজারের বেশি কর্মীকে বেতনসহ ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত আটকে দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা সাময়িকভাবে আটকে দিয়েছেন দেশটির একজন বিচারক। খবর বিবিসির।
সংস্থাটির কর্মীদের ছুটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে এই স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। বিচারক কার্ল নিকোলস বলেছেন, তিনি সীমিত সময়ের জন্য এই স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। ইউএসএআইডি কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন দুটি ইউনিয়নের দায়ের করা মামলার প্রতিক্রিয়ায় বিচারক কার্ল নিকোলস এই সাময়িক স্থগিতাদেশ জারি করেন।
সংস্থাটি বন্ধের বিষয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছিল এই দুটি ইউনিয়ন। এই আদেশ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ৬১১ জন কর্মী ছাড়া ইউএসএআইডি-এর ১০ হাজার কর্মীর প্রায় সবাইকে বেতনসহ প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল।
এরই মধ্যে সংস্থাটির ৫০০ কর্মীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার তাদের সঙ্গে আরও ২২০০ কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘন করছে এবং কর্মীদের ক্ষতি করছে এমন যুক্তিতে শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়।
বিচারক ইউনিয়ন দুটির পক্ষেই রায় দিয়েছেন। তবে বাকি কর্মীদের চাকরির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এরই মধ্যে ছুটিতে পাঠানো ৫০০ কর্মীকেও পরবর্তী নির্দেশনার আগ পর্যন্ত কাজে ফেরানোর কথা বলেছেন বিচারক।
মামলাকারী সংস্থাগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে যে, তারা আদালতের আদেশের লিখিত অনুলিপির জন্য অপেক্ষা করছেন যেন বোঝা যায় যে সব কর্মীর ওপর এর প্রভাব কেমন হবে।
এই রায় ঘোষণার সময় কর্মকর্তারা ওয়াশিংটন ডিসিতে ইউএসএআইডির সদর দপ্তর থেকে সংস্থাটির সাইনবোর্ড সরিয়ে দিচ্ছিলেন। ইউএসএআইডি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ত্রাণ সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা। এর বাজেটের বেশিরভাগ অংশই স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে ব্যয় হয়।
সংস্থাটির ১০ হাজার কর্মীর দুই-তৃতীয়াংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিভিন্ন দেশে কাজ করে। ট্রাম্প যুক্তি দিয়েছেন যে, ইউএসএআইডি জনগণের করের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করছে না। তার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি খরচ কমানোর জন্য অনেক সরকারি সংস্থার বাজেট কাটার চেষ্টা করছে।
ট্রাম্প সরকার সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং বাজেট কমানোর জন্য ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি- ডজ নামে একটি পরামর্শদাতা সংস্থা গঠন করেছিলেন। এর নেতৃত্বে আছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক। বিচারক নিকোলস শুক্রবার একটি জরুরি আবেদনের ভিত্তিতে এই রায় দিয়েছেন।
বিচারক নিকোলস,কে ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে মনোনীত করেছিলেন। তিনি বলেছেন, লিখিত আদেশ পরে প্রকাশ করা হবে এবং এতে আরও বিস্তারিত তথ্য থাকবে।
পাবলিক সিটিজেন নামে একটি সংগঠনের আইনজীবী লরেন বেটম্যান বলেছেন, আপাতত সংস্থার দুই হাজারের বেশি সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী নিরাপদ থাকবেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, সংস্থাটি বন্ধ করার চেষ্টা করে প্রেসিডেন্ট মার্কিন সংবিধান ও ফেডারেল আইন লঙ্ঘন করছেন। এতে আরও বলা হয়েছে, ইউএসএআইডি বন্ধের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে তার একটিও কংগ্রেসের অনুমোদন নিয়ে হয়নি। ফেডারেল আইনে বলা আছে, কেবল কংগ্রেসই আইনতভাবে এই সংস্থাটি বন্ধ করার অধিকার রাখে।
গত ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এতে বলা হয় সব বিদেশি সহায়তা স্থগিত থাকবে যতক্ষণ না সেই তহবিল যাচাই করা হয় এবং তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়।
- আরও পড়ুন:
- হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্দিবিনিময়, ছাড়া পাচ্ছে ১৮৩ ফিলিস্তিনি
- সৌদি আরবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বললেন নেতানিয়াহু
এর ফলে ইউএসএআইডির সব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। সংস্থাটি বিশ্বের প্রায় ১২০টি দেশে স্বাস্থ্য ও জরুরি সহায়তা কর্মসূচি পরিচালনা করে যার মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলো রয়েছে। এই সংস্থার বার্ষিক বাজেট প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার, যা মার্কিন সরকারের মোট ছয় দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাজেটের মাত্র দশমিক ছয় শতাংশ।
টিটিএন