নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় সংঘাত-হানাহানি বন্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের শপথ করিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ।
সোমবার (৩১ মার্চ) রাতে বুড়িরচর ইউনিয়নে ঈদ আনন্দ মিছিল শেষে সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে ‘শান্তির হাতিয়া’ গড়ার লক্ষ্যে তিনি হাত তুলে এ ওয়াদা করান।
এ সময় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আজকে থেকে আমরা সংঘাত হানাহানি বন্ধের ওয়াদা করলাম। ভবিষ্যতে কেউ আমাদের গালি দিলেও কারো গায়ে হাত তুইলেন না। কাঁধে হাতে দিয়ে বুঝিয়ে বলবেন ভাই কেনো গালি দিয়েছেন। মানুষকে সমালোচনা করতে সুযোগ দেবেন। বেশি বেশি সমালোচনা করলে আমরা পরিশুদ্ধ হবো। কারো সঙ্গে বিরাগ বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়বেন না। আমরা দ্বীপ হাতিয়ায় হানাহানির রাজনীতি বন্ধ করেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, হাতিয়ায় যাতায়াতে ৫০০ টাকার স্পিডবোট ভাড়া ৩০০ টাকা করা হয়েছে। এ সুবিধা হাতিয়ার সবাই ভোগ করছেন। শুনেছি লাগেজ প্রতি ৪০০-৫০০ টাকা নেওয়ার বরাদ্দ দিয়েছেন কোনো এক নেতা। সেসব নেতাকে বলে দিচ্ছি আমার হাতিয়ার মানুষের পকেটের দিকে যারা হাত বাড়াবেন তাদের হাত ভেঙে দেওয়া হবে।
এনসিপির কেন্দ্রীয় এ নেতা বলেন, হাসিনাকে দেশ ছাড়া করেছি, হাতিয়া থেকে চাঁদাবাজকেও বিতাড়িত করবো। কেউ নিজেকে হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর মতো ভেবে তার মতো হতে যাইয়েন না। মোহাম্মদ আলীর পরিণতি দেখেন। ঘাট বাণিজ্য করে কোটি টাকা কামিয়ে এখন তিনি কোথায়? দূর্গম এ জনপদে ওইরকম আর কোনো চাঁদাবাজের উত্থান হতে দেওয়া হবে না।
হান্নান আরও বলেন, হাতিয়ার আশপাশে যে চর উঠবে তা আর কোনো ভূমিদস্যুকে খেতে দেওয়া হবে না। অন্তত হান্নান মাসউদ বেঁচে থাকতে সেই স্বপ্ন কেউ আর দেইখেন না। আমরা মানুষের মুক্তির লড়াই করি। আমরা মানুষকে মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছি, আমাদের এ সংগ্রাম চলমান আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আমি মন্ত্রী-এমপি না। তবুও হাতিয়ার মানুষের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। গত ছয়মাসে আমি হাতিয়ায় ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার কাজ চালু করেছি। ঈদের পরেই নদী ভাঙনরোধে হাতিয়ার বিভিন্নস্থানে বস্তা পড়বে। এই সুযোগ কেবল আমার সঙ্গে যারা চলে তাদের জন্য নয়। এটি হাতিয়ার সবার জন্য। তাছাড়া নতুন খবর হলো, হাতিয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়েল অ্যানার্জি উৎপাদনের ব্যাপারে একমত হয়েছে। তারা ১৫ মেগাওয়াটের ওয়েট অ্যানার্জি উৎপাদন করবে।
আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, হাতিয়ার সমুদ্র সম্পদকে কাজে লাগিয়ে হাতিয়ার মানুষকে আমরা অর্থ বিত্ত করে দেব ইনশাআল্লাহ। হাতিয়ার মানুষের ব্লু ইকোনমি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ব্লু ইকোনমি হবে। এই ব্লু ইকোনমি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ উন্নত হবে। হানাহানি লেগে থাকলে এসব উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হবে।
তিনি বলেন, আমরা মারামারির রাজনীতি বন্ধ করবো। আমরা লাঠালাঠির রাজনীতি বন্ধ করবো। এর মধ্য দিয়ে হাতিয়ার মানুষের মুক্তি মিলবে। সেদিন আমাদের গায়ে হাত তুলেছিল আমরা হাজার হাজার মানুষ থাকা সত্ত্বেও তাদের সঙ্গে আমরা মারামারি করি নাই। মারামারি করলে দিন দিন মারামারি বাড়তে থাকবে। আমরা শান্তি চাই। তাই শান্তিপূর্ণ হাতিয়া গড়ে তুলবো। হাতিয়ার এ মডেল দেখে সারাদেশের সব উপজেলা হাতিয়াকে হিংসা করবে।
আনন্দ মিছিলে জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য মো. ইউসুফ রেজা, তৌহিদুর রহমান, মো. ইসমাইল এবং হামিদুর রহমানসহ সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
ইকবাল হোসেন মজনু /এমআরএম