মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) হামাসকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, গাজার জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে চুক্তি এখনই মেনে নিতে হবে। ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লিখেছেন, ইসরায়েল আমার শর্ত মেনে নিয়েছে। এখন হামাসেরও মেনে নেওয়ার সময় এসেছে। আমি এর আগে হামাসকে পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করেছি। এটাই আমার শেষ সতর্কবার্তা। খবর এএফপির।
এর কিছুক্ষণ পর হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাওয়া ‘কিছু প্রস্তাবের ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে তাৎক্ষণিকভাবে প্রস্তুত।’
মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানায়, গত সপ্তাহে হোয়াইট হাউজের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির একটি নতুন প্রস্তাব হামাসের কাছে পাঠিয়েছেন। যদিও হোয়াইট হাউজ এই প্রস্তাবের বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।
রোববার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, আমাদের কিছু খুব ভালো আলোচনা হয়েছে। ভালো কিছু ঘটতে পারে। আমি মনে করি, খুব শিগগির গাজা নিয়ে একটি চুক্তি হতে যাচ্ছে।
গত মার্চ মাসেও ট্রাম্প হামাসকে একই রকম চূড়ান্ত আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলেন, সব জীবিত জিম্মিকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে এবং নিহতদের দেহাবশেষ ফিরিয়ে দিতে হবে, না হলে ‘তোমাদের জন্য সব শেষ।’
ইসরায়েলের নাগরিক সংগঠন হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিজ ফোরাম ট্রাম্পের সর্বশেষ হস্তক্ষেপকে ‘একটি সত্যিকারের অগ্রগতি’ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।
হামাসের হাতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো হামলার সময় মোট ২৫১ জন জিম্মি হয়। এর মধ্যে এখনও ৪৭ জনকে গাজায় আটক রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, এদের মধ্যে ২৫ জন নিহত হয়েছেন এবং তাদের দেহাবশেষ ফেরত চাইছে ইসরায়েল।
গাজা সিটিতে তীব্র হামলা
ট্রাম্প ও হামাসের বিবৃতির মধ্যেই রোববার ইসরায়েলি সেনারা গাজা সিটির একটি আবাসিক টাওয়ারে বিমান হামলা চালায়। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, সেনারা শহরে অভিযানের গতি ‘আরও গভীর করছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-নাজলি জানান, আল-রোয়া টাওয়ারে হামলার সময় ‘মনে হচ্ছিল ভূমিকম্প হচ্ছে।’
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, কেবল রোববারের হামলায় অন্তত ৪৮ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনারা দাবি করছে, ধ্বংস হওয়া টাওয়ারগুলো হামাস নজরদারির কাজে ব্যবহার করছিল।
নেতানিয়াহু বলেন, প্রায় এক লাখ মানুষ এরই মধ্যে গাজা সিটি ছেড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, হামাস বেসামরিক মানুষকে জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করছে এবং সরিয়ে নেওয়া ঠেকাচ্ছে।
ইসরায়েলের তীব্র আগ্রাসনে গাজার মানবিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শনিবার ইসরায়েলে শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে সরকারকে গাজা সিটি দখলের অভিযান থামাতে আহ্বান জানিয়েছে। তাদের আশঙ্কা, শহরেই হয়তো জিম্মিদের আটক রাখা হয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলায় ইসরায়েলের ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হন। এর জবাবে চালানো ইসরায়েলি হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৪ হাজার ৩৬৮ জন নিহত হয়েছেন বলে হামাসনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে।
টিটিএন