হার্ট অ্যাটাক মানেই বুকে ব্যথা না, জেনে নিন নীরব লক্ষণগুলো

2 hours ago 4

অনেক সময় আমরা ভাবি, হার্ট অ্যাটাক মানেই বুক চেপে ধরা ব্যথা। কিন্তু জানেন কি, হার্ট অ্যাটাক সবসময় এত স্পষ্টভাবে দেখা দেয় না? কখনো কখনো কোনো রকম ব্যথা ছাড়াই হয়ে যেতে পারে হার্ট অ্যাটাক–যাকে বলা হয় ‘নীরব হার্ট অ্যাটাক’ বা Silent Heart Attack।

আরও পড়ুন : চোখের নীরব বিপদ ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি

আরও পড়ুন : এক মাসে কতটা ওজন কমানো নিরাপদ, জানালেন চিকিৎসক

এই ধরনের হার্ট অ্যাটাক অনেক সময় টেরই পাওয়া যায় না, অথচ এর পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। সম্প্রতি ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরবিন্দু শেখর রায় এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য শেয়ার করেছেন, যা জানা আমাদের সবারই দরকার।

হার্ট অ্যাটাক কেন হয়?

হার্ট অ্যাটাক সাধারণত হয় যখন হার্টের রক্তনালিতে ব্লক বা বন্ধ হয়ে যায় রক্ত চলাচল। ফলে হার্টের মাংসপেশি ঠিকভাবে অক্সিজেন পায় না এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ হলো হঠাৎ করে বুকের মাঝখানে ব্যথা, যেন কেউ চেপে ধরেছে বা ভারী কিছু বসে আছে বুকের ওপর। এই ব্যথা বিশ্রাম নিলেও কমে না, বরং সময়ের সঙ্গে আরও বাড়ে। ঘাম, বমিভাব বা বমি হওয়ার অনুভূতিও হতে পারে।

নীরব হার্ট অ্যাটাক মানে কী?

সব হার্ট অ্যাটাকই এমনভাবে ধরা দেয় না। কিছু হার্ট অ্যাটাক হয় একেবারে ‘নীরবে’, মানে কোনো বড় ব্যথা বা স্পষ্ট লক্ষণ ছাড়াই। গবেষণা বলছে, প্রতি ৫ জন হার্ট অ্যাটাক রোগীর মধ্যে একজনের হয় এই নীরব হার্ট অ্যাটাক।

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

নীরব হার্ট অ্যাটাক সাধারণত যাদের হতে পারে:

- বয়স্করা (বয়স বাড়লে শরীরের সংকেত বোঝা কঠিন হয়)

- ডায়াবেটিস বা স্নায়বিক সমস্যা রয়েছে এমন ব্যক্তি

- নিয়মিত ব্যথানাশক বা স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাচ্ছেন যারা

- নারীদের মধ্যে এ ধরনের অ্যাটাকের হার তুলনামূলক বেশি

যেসব লক্ষণ দেখে সাবধান হতে হবে

বুকে ব্যথা না থাকলেও নীরব হার্ট অ্যাটাকের কিছু উপসর্গ থাকে, যেমন:

- হাতে, কাঁধে, চোয়ালে বা পিঠের ওপর দিকে ব্যথা

- গ্যাসের মতো পেটে অস্বস্তি বা ব্যথা

- বদহজম, বমি বমি ভাব বা আসলেই বমি

- হঠাৎ ক্লান্ত লাগা বা নিঃশ্বাসে কষ্ট

- ঘাম, মাথা ঝিমঝিম করা বা মাথাব্যথা

- রক্তচাপ কমে যাওয়া

কীভাবে ধরা পড়ে?

এই ধরনের অ্যাটাক ধরতে হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করতে হয়:

ইসিজি (ECG): হার্টের সিগন্যাল দেখা যায়

ট্রপোনিন টেস্ট: রক্তের একটি বিশেষ পরীক্ষা

ইকোকার্ডিওগ্রাম: হার্টের পাম্পিং ঠিক আছে কি না বোঝা যায়

যেকোনো সন্দেহ হলে সময় নষ্ট না করে হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

দেরি করলে কী হতে পারে?

যদি নীরব হার্ট অ্যাটাক ধরা না পড়ে, তাহলে:

- হার্ট দুর্বল হয়ে যেতে পারে

- পাম্পিং কমে যেতে পারে

- হৃৎপিণ্ড বড় হয়ে যেতে পারে

- এমনকি জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে

কীভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন?

- বুকের যেকোনো ব্যথা বা অস্বস্তিকে গুরুত্ব দিন

- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল থাকলে সতর্ক থাকুন

- পারিবারিক ইতিহাস থাকলে নিয়মিত চেকআপ করুন

- ধূমপান, অনিয়মিত জীবনযাপন থেকে দূরে থাকুন

- হঠাৎ ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট বা বমিভাব হলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন

আরও পড়ুন : কিডনি ভালো না থাকলে শরীর যেভাবে সিগন্যাল দেয়

আরও পড়ুন : ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচতে চাইলে এখনই বদল আনুন জীবনধারায়

হার্ট অ্যাটাক সবসময় ড্রাম বাজিয়ে আসে না। অনেক সময় নীরবেই ঘটে যায় বড় ক্ষতি। তাই নিজের শরীরকে গুরুত্ব দিন, নিয়মিত পরীক্ষা করুন আর যেকোনো অস্বাভাবিকতা হলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। সতর্কতা, সচেতনতা আর সময়মতো পদক্ষেপই পারে জীবন বাঁচাতে।

Read Entire Article