হাসপাতালের উচ্চমূল্যে টেন্ডার পেতে চক্রান্ত, ছড়ানো হচ্ছে অপতথ্য

3 hours ago 2

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে পুরোনো দরেই সরবরাহ করা হচ্ছে রোগীদের খাদ্য। বর্তমান বাজারদরের তুলনায় বেশি খাবার পাচ্ছেন তারা। এতে রোগী ও সরকার উভয়ই লাভবান হচ্ছে। 

কিন্তু একটি সংঘবদ্ধ চক্র নতুন টেন্ডার আহ্বানের মধ্য দিয়ে উচ্চমূল্যে বাজারদর দিয়ে টেন্ডার পেতে নানামুখী চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াতে চলছে অপপ্রচার।

অপপ্রচারেরত সিন্ডিকেট এরই মধ্যে হাসপাতালে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে। তবে সরেজমিন হাসপাতাল পরিদর্শন করে সিভিল সার্জনসহ দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুরোনো দরপত্র অনুযায়ী হাসপাতালে রোগীদের খাদ্য সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। দৈনিক রোগীপ্রতি ১২৫ টাকা বরাদ্দে মালামাল গ্রহণ করা হচ্ছে। নতুন টেন্ডার আহ্বান হলে টেন্ডারে বাজারদর বেড়ে যাবে, ফলে বরাদ্দের টাকায় এখন যে পরিমাণ খাবার পাচ্ছেন রোগীরা তখন সেই পরিমাণ খাবার পাবেন না, পরিমাণ কমে যাবে। দরপত্র সিন্ডিকেট করে বাজার মূল্য বৃদ্ধি করে ব্যক্তিগত লাভবান হওয়ার আশায় একটি সুযোগ সন্ধানী চক্র বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দরপত্র সংক্রান্ত একটি মামলায় টেন্ডার কার্যক্রমের ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে মামলাটি বিচারাধীন থাকায় পূর্ব ঠিকাদার পূর্বের দরপত্রে খাদ্য-পথ্য সরবরাহ অব্যাহত রেখেছেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ১নং ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগী কেসমত মোড়ল জানান, সকালে একটি কলা, একটি ডিম, একটি পাউরুটি ও অনুমান ২৫ গ্রাম চিনি নাস্তা পেয়েছি। দুপুরে আনুমানিক প্রায় দুইশো গ্রাম চালের ভাত, একপিস রুই মাছ, আলু দিয়ে তরকারি ও ডাল পেয়েছি। রাতেও একই খাবার দেওয়া হয়। একই ধরনের তথ্য জানান হাসপাতালে ভর্তি থাকা অন্যান্য রোগীরাও।

২নং ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত রোগী রফিকুল ইসলাম মিস্ত্রি জানান, তিনি পাঁচ দিন ভর্তি থাকলেও কোনো খাবার পাননি। শুধু আমি নই আরও অনেকেই আছেন যারা খাবার পান না।

খাবার না পাওয়ার বিষয়ে হাসপাতালের সরকারি বাবুর্চি রেজাউল ইসলাম বাবু জানান, সরকারিভাবে বরাদ্দ দৈনিক একশ রোগীর খাবার। সেই পরিমাণ খাবার দেওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি থাকেন ১৬০-১৮০ জন রোগী। সেকারণে বরাদ্দ না থাকায় বাকি রোগীরা খাবার পান না।

২নং ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগী মানিক মোড়ল জানান, তিনি চার দিন ধরে ভর্তি, অথচ এখনো হাসপাতালের কোনা খাদ্য পাননি। ভর্তি সব রোগীদের ওষুধ, বালিশ, বেড শিট, চিকিৎসা সবই দেওয়া হয় তাহলে তাদের খাদ্য দেওয়া হয় না কেন? গরীব শ্রেণির মানুষই বেশিরভাগ সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। এসব মানুষগুলো কী খাবেন? আর ১২৫ টাকায় তিন বেলা কি খাবার হয়। দৈনিক রোগী প্রতি ২৫০ টাকা সরকারি বরাদ্দ দেওয়ার দাবিও তোলেন তিনি।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহকারী ঠিকাদার এসএম নজরুল ইসলাম জানান, কর্তৃপক্ষের দৈনিক চাহিদা মতে সুনামের সঙ্গে দীর্ঘদিন রোগীদের খাদ্য, পথ্য ও ধোলাই সরবরাহ করে আসছি। প্রতিপক্ষ একজন ঠিকাদার কাজটি না পাওয়ায় ব্যক্তি স্বার্থে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তার উদ্দেশ্য আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করে কাজটি বাগিয়ে নেওয়া। আমি সব প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ সচেতন মানুষদের সরেজমিন হাসপাতাল পরিদর্শন ও খাদ্য সরবরাহের সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফয়সাল আহমেদ জানান, রোগীদের দৈনিক খাদ্য তালিকা অনুযায়ী ঠিকাদারের নিকট থেকে মালামাল বুঝে নেওয়া হয়। রোগীদের নিম্ন মানের খাদ্য সরবরাহ বা পরিমাণে কম নেওয়ার সুযোগ নেই।

সিভিল সার্জন কার্যালয় ও হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পূর্ব দরপত্রে খাবার সংগ্রহ করায় রোগীরা বর্তমান বাজারদরের তুলনায় খাবার বেশি পাচ্ছেন এটা সঠিক। এতে লাভবান হচ্ছেন রোগীরা। বর্তমান টেন্ডার হলে বাজারদর বেড়ে যাবে, তখন রোগীদের খাবারের পরিমাণ কমে যাবে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম কালবেলাকে জানান, নিম্নমানের বা পরিমাণে কম খাবার গ্রহণ করা হয় না। আদালতে মামলা থাকায় পূর্বের ঠিকাদার খাবার সরবরাহ করে আসছেন। আদালতে বিচারাধীন মামলাটি নিষ্পত্তির পর নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা হবে।

Read Entire Article