৪ কারণে ভেঙে দুই ভাগ হয়েছিল চট্টগ্রামের সেতুটি

6 hours ago 3
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী সড়কের শীতল ঝরনা খালের ওপর সেতুটি ভেঙে দুই ভাগ হয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে পেয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে তদন্ত কমিটি সেতু ভেঙে যাওয়ার পেছনে ৪টি কারণ তুলে ধরেন। পাশাপাশি এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ৪টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। বুধবার (২৭ আগস্ট) রাতে সিটি করপোরেশনের গঠিত চার সদস্যের তদন্ত কমিটি তিন পাতার প্রতিবেদন জমা দেয়।    প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেতু ভাঙনের প্রধান কারণ হলো এর পুরোনো কাঠামো। প্রায় ৫০ বছর আগে নির্মিত এ সেতুটি ইটের অ্যাবাটমেন্ট ওয়ালের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল। পরে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের সময় শীতল ঝরনা খালের প্রশস্ততা ৬ মিটার থেকে ১৩ মিটার করা হলেও সেতুটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি। ফলে খালের তলদেশ থেকে মাটি সরে গিয়ে সেতুর ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ ছাড়া আরও তিনটি কারণ চিহ্নিত করেছে কমিটি—১. সেতুর পূর্ব পাশের একটি নালার পানি সরাসরি সেতুর ভিত্তিতে গিয়ে আঘাত করত, এতে ক্ষয় দ্রুত বাড়তে থাকে। ২. নির্মাণের সময় এ সড়কে গাড়ির চাপ সীমিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার যানবাহন, বিশেষ করে ভারী ট্রাক-লরি চলাচল করায় সেতুটি অতিরিক্ত চাপে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৩. ওয়াসার বড় পাইপলাইনের সংযোগ স্থাপনের সময় খালের ভেতর আরসিসি বক্স নির্মাণ করা হয়, যা সেতুর স্থায়িত্বে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, শুধু শীতল ঝরনা সেতুই নয়, চট্টগ্রাম নগরের অনেক পুরোনো সেতুতেও একই ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। অনেক খাল প্রশস্ত করার পরও পুরোনো সেতুগুলো যথাযথভাবে সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণ করা হয়নি। এতে নগরের অনেক অবকাঠামো ঝুঁকির মধ্যে আছে। তদন্ত কমিটি ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে চারটি সুপারিশ করেছে। এগুলো হলো—খালের প্রশস্ততা যেখানে বেড়েছে, সেখানে পুরোনো সেতুগুলো ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণ করতে হবে, খালের দুই পাশে পুরোনো প্রতিরোধ দেয়াল ভেঙে নতুন প্রতিরোধ দেয়াল নির্মাণ করতে হবে, যে সেতুগুলো ভারী যানবাহনের চাপ সহ্য করতে সক্ষম নয়, সেগুলোর তালিকা করে সতর্কতা সাইনবোর্ড বসাতে হবে এবং প্রয়োজনে সেখানে ভারী যান চলাচল বন্ধ করতে হবে ও সেবা সংস্থাগুলো পাইপলাইন বসানো বা স্থানান্তরের সময় যেন সেতু ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ জানিয়েছে, একই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়ক উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ৮ থেকে ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩ মিটার প্রশস্ত ও ১৫ মিটার দীর্ঘ নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে। দরপত্র প্রক্রিয়া চলছে। প্রসঙ্গত, গত ৭ আগস্ট ভোরে ভারী বর্ষণের সময় শীতল ঝরনা সেতুটির একটি পাশ ভেঙে খালে পড়ে যায়। অন্য পাশ দিয়ে এখনো যান চলাচল অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় সিটি করপোরেশন সংস্থার প্রধান প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি করে সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনটি মেয়রের কাছে উপস্থাপন করা হবে।  
Read Entire Article