৫৩ বছর ধরে শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে : জাতীয় নাগরিক কমিটি

2 hours ago 4

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের অবৈধ প্রজ্ঞাপন বাতিলসহ শিক্ষকদের পক্ষে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটির। সংগঠনটির দাবি কাঙ্ক্ষিত জাতি গঠনে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে শিক্ষা। কিন্তু তাদের গত ৫৩ বছরে মূল্যায়ন করা হয়নি। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অবহেলিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই বিষয় অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে বারবার বলার পর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। 

বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলামোটর জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষে এসব কথা বলা হয়।

সংবাদ সম্মেলন জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়, সুন্দর ও কাঙ্ক্ষিত জাতি গঠনে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে শিক্ষা। তবে বাংলাদেশের ৫৩ বছরের বাস্তবতায় শিক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। শিক্ষকরা শিক্ষা ব্যবস্থার অপরিহার্য অংশ, যা পেশা হিসাবে কখনোই যথাযথ মূল্যায়ন পায়নি। এরমধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ অংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আরও বেশি অবহেলিত।  ২০১৩ সালে জাতীয়করণের অন্তর্ভুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮ হাজার ৭২০ শিক্ষকদের  জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টাইমস্কেলসংক্রান্ত বিধির বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১২ আগস্ট অবৈধ প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, গ্রামে শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য এলাকার জনসাধারণের উদ্যোগে সারা দেশে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। এসব বিদ্যালয়গুলোতে সরকারি বিধি অনুযায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তহয়ে পাঠ দান চলার একপর্যায়ে ২৪ বছর আন্দোলন সংগ্রাম করার পর গত ৯ জানুয়ারি ২০১৩ সালে ছাব্বিশ হাজার একশত তিরানব্বইটি (২৬,১৯৩) বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এক লক্ষ চার হাজার শিক্ষককে জাতীয়করণ করা হয়। জাতীয়করণ ঘোষণার পর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (চাকরি শর্তাবলি নির্ধারণ) বিধিমালা ২০১৩ অনুযায়ী বাংলাদেশ গেজেটের বিধিমালার ২(গ)এ ২০১২ সালের ডিসেম্বর  পর্যন্ত বেসরকারি চাকরির দৈর্ঘ্যতার ৫০% কার্যকর চাকরিকাল হিসেবে গণনা করে গেজেটের ৯ এর উপবিধি ৩ এ কার্যকর চাকরিকালের ভিত্তিতে টাইমস্কেল প্রাপ্তির বিধি বিধান বাস্তবায়নের ফলে জাতীয়করণকৃত শিক্ষকগণ সে অনুযায়ী সুযোগ সুবিধার অংশীজন হন।
 
যা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ২০১৪ সালে ২১জানুয়ারি পরিপত্রের আলোকে  প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে ৫ জুন আরও সুবিধা দিতে একটি পরিপত্র জারি করে। এতে টাইমস্কেল প্রদানের বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনায় ৫০% কার্যকর চাকরিকাল হিসেবে ৮, ১২ এবং ১৫ বছরপূর্তিতে টাইমস্কেল প্রাপ্য হলে; জেলা প্রাথমিক শিক্ষাঅফিস কর্তৃক টাইমস্কেল মঞ্জুরি করলে; হিসাব রক্ষণ অফিস তা বিধি সম্মত মেনে নিয়ে ৪৮ হাজার৭২০ জন শিক্ষকের টাইমস্কেলসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

সরকারি বিধি-বিধানের আলোকে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষক টাইমস্কেল ভোগ করে।  কিন্তু হঠাৎ ৮ বছর পর ২০২০ সালের ১২ আগস্ট  অর্থমন্ত্রণালয় কর্তৃক টাইমস্কেল প্রাপ্য হবে না। এ মর্মে একটি পত্র জারি করেন। যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও অবৈধ।

উল্লেখ্য, জাতীয় বেতনস্কেল ২০১৫ জারির পূর্ব পর্যন্ত ০৮.১২ ও ১৫ বছরপূর্তিতে টাইমস্কেল প্রদানের বিষয়টি প্রচলিত ছিল। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের ১২ আগস্ট চিঠি দেওয়ার আগ পর্যন্ত সরকারি নিয়মানুযায়ী অবসরে যাওয়া শিক্ষকগণ সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছিলেন। অনেক শিক্ষক সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে মৃত্যুবরণও করেছেন। দুঃখজনক হলে সত্য যে বর্তমানে যারা পিআরএল, পেনশনে যাচ্ছেন তারা ওই পত্রের কারণে অমানবিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আবার অনেকে ন্যায্য পাওনা না পেয়ে অসুস্থতায় ভুগছেন এবং কেউ ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন যা সম্পূর্ণ অমানবিক ও বেআইনি।

শিক্ষকদের অবর্ণনীয় কষ্ট লাঘবে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্তা নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। একই সঙ্গে ২০২০সালে ১২ আগস্ট ৯২নং স্মারকে অবৈধ পত্রটি বাতিল করারও দাবি করছে। প্রজ্ঞাপনের প্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা যেন কোনো প্রকার হয়রানির শিকার না হন তা নিশ্চিত করতে হবে। বৈষম্যের শিকার জাতীয়করণকৃত শিক্ষকগণ ৭ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছেন, শিক্ষকদের অমানবিক কষ্টের কথা বিগত স্বৈরাচার সরকারের প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব কেউই কোনো প্রকার গুরুত্ব দেননি। অবশেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বিগত সরকার বিতাড়িত হয়।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা মহোদয়সহ সংশিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার সদয় দৃষ্টি কামনা করা হয়। কিন্তু আজ অবধি এ বিষয়ে কোনো প্রকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষকগণ মর্মাহত ও সংক্ষুব্ধ হন। এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি উদ্বিগ্ন এবং একইসঙ্গে অতিদ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বর্তমান সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। 

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার সদয় দৃষ্টি কামনা করা হয়। কিন্তু আজ অবধি এবিষয়ে কোনো প্রকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় শিক্ষকগণ মর্মাহত ও সংক্ষুব্ধ হন। এ বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি উদ্বিগ্ন এবং  একইসাথে অতিদ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য  সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম চৌধুরী ও অন্যান্য নেতারাসহ ৬৪ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।

Read Entire Article