নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল মির্জারচর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নটি মেঘনা নদী ও শাখা নদীর মাঝখানে অবস্থিত। বলা চলে, এ ইউনিয়নের চারপাশ দিয়েই বয়ে গেছে নদী। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে ১০ দশমিক ৭০ বর্গকিলোমিটার এলাকার চারপাশেই পানি থইথই করে।
নদীভাঙন কবলিত এলাকা হিসেবেও পরিচিত এ ইউনিয়নটি। এখানকার নদীভাঙন ও বন্যাকবলিত চরাঞ্চলবাসীর জন্য ২০১৯ সালে ‘বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প (৩য় পর্যায়)’-এর আওতায় মির্জাচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পাশে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ শুরু করে।
প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটির নির্মাণকাজ দীর্ঘ ছয় বছরেও শেষ হয়নি। কাঙ্ক্ষিত সুফল না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন চরবাসী। উল্টো অরক্ষিত ভবনটি এখন পরিণত হয়েছে বখাটে ও মাদকসেবীদের আখড়ায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, মির্জাচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের পাশে তিনতলা বিশিষ্ট দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটি বাইরে থেকে দেখে মনে হয় কোনো পরিত্যক্ত স্থাপনা। অথচ এটি হওয়ার কথা ছিল বিদ্যালয়ের ক্লাসরুম এবং দুর্যোগকালে বন্যার্তদের নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র।
প্রথমে ভবনটির ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে ময়লা-আবর্জনাসহ নোংরা পরিবেশ। সিঁড়ি কোঠায় পানি জমে শেওলা পড়ে বিভিন্ন আগাছা জন্মেছে। শুধু সেখানেই নয় অনেক রুমের ভেতরেও শেওলা পড়ে দেয়ালে আগাছা জন্মাতে দেখা গেছে।
সিমেন্ট কম ব্যবহারের কারণে, ভবনের অনেক স্থানেই দেয়াল থেকে খসে পড়েছে টাইলস। তিনতলা বিশিষ্ট এ ভবনটির প্রধান ফটকসহ কোনো রুমেই দরজা না থাকায় এখানে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেশি। তারা এখানে নির্বিঘ্নে মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। বলা চলে, এ ভবনটি এখন অপরাধপ্রবণ মানুষের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
মির্জারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমন মিয়া বলেন, এ স্কুলে আমি ষষ্ঠ শ্রেণিতে এসে ভর্তি হওয়ার সময় দেখেছি আশ্রয়কেন্দ্রের কাজ চলতেছে। আমি এখন দশম শ্রেণিতে পড়ি, এখনো এ ভবনের কাজটি সম্পন্ন হয়নি। এ ছাড়া ভবনের কোনো দরজা-জানালা না থাকায় এর ভেতর মাদকসেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলে আসছে। বিশেষ করে দেয়ালে বিভিন্ন অশ্লীল কথা লিখে রেখেছে বখাটেরা, যা দেখে আমরা বিব্রত হই।
স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ ৬ বছর ধরে দরজা-জানালাবিহীন ভবনটি পড়ে থাকায় এটি মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে বারবার ঠিকাদারকে কাজ সম্পন্ন করার জন্য বলা হলেও কোনো কর্ণপাত করেননি। এতে করে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পরই মাদকসেবীদের কারণে স্কুলের পাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে আমাদের ভয় হয়।
মির্জারচর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন জানান, তৃতীয় তলা পর্যন্ত ছাদ ও দেয়াল নির্মিত হলেও আরও অনেক কাজ বাকি আছে। কাজ শেষ হলে বিদ্যালয়ের পাঠদান ও দুর্যোগকালীন মানুষের জন্য উপকারে আসবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মামুন এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. মিনহাজ খান বলেন, চরের কোনো নির্মাণ শ্রমিক এখানে কাজ করে না। উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চল থেকে নির্মাণ শ্রমিকরা আসে এবং এখানে থেকে কাজ করে। দুই গ্রুপের মধ্যে স্থানীয় দ্বন্দ্ব সব সময়েই লেগে থাকে। এ কারণেই শ্রমিকরা ভয়ে এখানে কাজ করতে আসতে চায় না। ভবন নির্মাণ সামগ্রীও লুট হয়েছে কয়েক দফায়। এ ছাড়া নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এখন অল্প কিছু কাজ রয়েছে। সেটা আগামী দুই মাসের ভেতরেই শেষ করে ভবন হস্তান্তর করা হবে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রকল্পটি ২০১৯ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। ঠিকাদারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সাড়া মেলেনি। লিখিত চিঠির পর তারা জানিয়েছে, দ্রুতই কাজ সম্পন্ন করবে।
রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা জানান, আশ্রয়কেন্দ্রটির কাজ এরই মধ্যে প্রায় নব্বই শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও স্থানীয় কোন্দলের কারণে এ কাজটি বারবার আমাদের পেছাতে হয়েছে। অবশিষ্ট কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।