৮ বছর ধরে হেঁটেই রান্না করা খাবার বিক্রি করেন রুবি আক্তার

বোরকা পরিহিত একজন নারী। ওড়না দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকা। শুধু দুটি চোখ খোলা রেখে দুহাতে দুটি ভারী ব্যাগ নিয়ে দ্রুতগতিতে হেঁটে চলেছেন নিজ গন্তব্যে। হাঁটার গতি দেখে মনে হচ্ছিল দম ফেলার সময়টুকুও তার হাতে নেই। অনুমানটাও সঠিক হলো। কথা বলে জানা গেলো অসংখ্য ক্ষুদ্র কর্মজীবী মানুষ এই নারীর অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি যাবেন, এরপর নিজের হাতে থাকা ব্যাগভর্তি খাবারের বক্সগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করবেন। কথাগুলো বলছিলাম নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জীবনযুদ্ধে হাল না ছাড়া সংগ্রামী নারী রুবি আক্তারকে (৩৩) নিয়ে। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী স্বামী লোকসান খেয়ে দেউলিয়া হয়ে পথে বসেন। পরে নিজেই ধরেন সংসারে হাল। বর্তমানে তার উপার্জনেই চলছে সংসার। আলাপকালে জানা গেছে, বেশ সুখে-শান্তিতেই দিন কাটছিল রুবি আক্তারের। তিন সদস্যের পরিবারে তার স্বামী স্বপন আহমেদ ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। একসময় স্বপন আহমেদের নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি এলাকায় বায়িং হাউজ (পোশাক তৈরির কারখানা) ছিল। ২০১৮ সালে ব্যবসায় তিনি বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হন। এখানেই শেষ নয়, শেয়ার বাজারে বড় আকারে বিনিয়োগ করা অর্থ খুইয়ে একেবারে দেউলিয়া হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ওইসময় পরি

৮ বছর ধরে হেঁটেই রান্না করা খাবার বিক্রি করেন রুবি আক্তার

বোরকা পরিহিত একজন নারী। ওড়না দিয়ে মুখমণ্ডল ঢাকা। শুধু দুটি চোখ খোলা রেখে দুহাতে দুটি ভারী ব্যাগ নিয়ে দ্রুতগতিতে হেঁটে চলেছেন নিজ গন্তব্যে। হাঁটার গতি দেখে মনে হচ্ছিল দম ফেলার সময়টুকুও তার হাতে নেই। অনুমানটাও সঠিক হলো।

কথা বলে জানা গেলো অসংখ্য ক্ষুদ্র কর্মজীবী মানুষ এই নারীর অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি যাবেন, এরপর নিজের হাতে থাকা ব্যাগভর্তি খাবারের বক্সগুলো তাদের কাছে হস্তান্তর করবেন।

কথাগুলো বলছিলাম নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের জীবনযুদ্ধে হাল না ছাড়া সংগ্রামী নারী রুবি আক্তারকে (৩৩) নিয়ে। গার্মেন্টস ব্যবসায়ী স্বামী লোকসান খেয়ে দেউলিয়া হয়ে পথে বসেন। পরে নিজেই ধরেন সংসারে হাল। বর্তমানে তার উপার্জনেই চলছে সংসার।

আলাপকালে জানা গেছে, বেশ সুখে-শান্তিতেই দিন কাটছিল রুবি আক্তারের। তিন সদস্যের পরিবারে তার স্বামী স্বপন আহমেদ ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ। একসময় স্বপন আহমেদের নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি এলাকায় বায়িং হাউজ (পোশাক তৈরির কারখানা) ছিল। ২০১৮ সালে ব্যবসায় তিনি বড় ধরনের লোকসানের সম্মুখীন হন। এখানেই শেষ নয়, শেয়ার বাজারে বড় আকারে বিনিয়োগ করা অর্থ খুইয়ে একেবারে দেউলিয়া হয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন।

ওইসময় পরিবারের মুখে দুবেলা দুমুঠো খাবার তুলে দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছিল স্বপনকে। ঠিক তখনই সংসারের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেন রুবি আক্তার। চক্ষুলজ্জাকে উপেক্ষা করে নিজেই রান্না করে সেই খাবার মানুষের দোকানে দোকানে বিক্রির করার উদ্যোগ নেন। অভিজ্ঞতা না থাকায় শুরুতে হোঁচট খেতে হয়। তারপরও দমে যাননি। সেই ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা আট বছর ধরে তার এই সংগ্রাম চলমান।

জীবিকার তাগিদে এতদিন ধরে ফেরি করে খাবার বিক্রি করলেও নিজের পর্দা রক্ষায় ত্রুটি নেই। তার কাছ থেকে খাবার কেনা কিংবা আশপাশের কোনো পুরুষ এখন পর্যন্ত চেহারা দেখা তো দূরের কথা নামটাও জানেন বলে জানা গেছে। কেউ যেহেতু তার চেহারা দেখেননি এবং ব্যক্তিগত চেনেন না, তাই ‘ভাবি’ বলেই ডাকেন খাবারের ক্রেতারা।

৮ বছর ধরে হেঁটেই রান্না করা খাবার বিক্রি করেন রুবি আক্তার

ঝালকাঠি জেলার ফুল মিয়া হাওলাদারের মেয়ে রুবি আক্তার। বর্তমানে নাসিক ১ নম্বর ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় পরিবারসহ বসবাস। একযুগ আগে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। স্বামীর নাম স্বপন আহমেদ। বিয়ের দুবছরের মাথায় তাদের সংসারে রেদোয়ানা আক্তার নামের একটা মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। বর্তমানে তার বয়স ১০ বছর।

একটানা আট বছর ধরে চিটাগাং রোডের কয়েকটি শপিংমলে নিয়মিত খাবার বিক্রি করছেন রুবি আক্তার। প্রতিদিন বাসায় রান্না করে দুপুরের খাবার আর বিকেলের নাশতা শপিংমলে ঘুরে ঘুরে দোকানিদের কাছে বিক্রি করেন। দাম কম ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় তার খাবারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

রুবি আক্তার জানান, তিনি প্রতিদিন দুপুরে অন্তত ৫০ বক্স খাবার বিক্রি করেন। যার মূল্য নেন ১০০-১৫০ টাকা। ১০০ টাকার প্যাকেজের খাবারে থাকে ভাত, ডাল, আলু ভর্তা আর কক মুরগির মাংস। ১৫০ টাকার প্যাকেজে দেওয়া হয় ফ্রায়েড রাইস ও মোরগ পোলাও। একইভাবে প্রতি বিকেলে ২০০ বক্স নাশতা বিক্রি হয়। আইটেম থাকে বার্গার, নুডলস আর শর্মা। মূল্য রাখা হয় ৩০-৬০ টাকা। দুই বেলার খাবার তৈরিতে প্রায় সাত ঘণ্টা সময় লেগে যায়।

রুবি আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৮ সালে আমার স্বামী ব্যবসায় লোকসান খাওয়ার পর আমরা দেউলিয়া হয়ে যাই। ঠিক তখনই আমি খাবার বিক্রির উদ্যোগ নিই। শুরুতে আমার স্বামীর সাহায্যেই সব রান্না করতাম। যখন ক্রেতা সংখ্যা বাড়তে শুরু করলো, তখন দুজন সহযোগীকে নিয়ে নিলাম। তাদের দুজনের পেছনে আমার প্রতিদিন ৮০০ টাকা মজুরি যায়। আমি আল্লাহর রহমতে বর্তমানে খুব ভালো আছি।’

রুবি আক্তারের কাছ থেকে নিয়মিত খাবার কেনা কাসসাফ শপিং সেন্টারের দোকানি ইমন গাজী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার দুপুরে বাসায় যাতায়াতে অনেক সময় পার হয়ে যায়। এজন্য ভাবির কাছ থেকে খাবার কিনে খাই। তার খাবার বেশ সুস্বাদু। উনি বহুদিন ধরেই আমাদের কাছে খাবার বিক্রি করছেন।’

বিজয় নামের আরেক দোকানি বলেন, ‘ভাবিকে অনেক বছর ধরে চিনি। উনি নিয়মিত আমাদের কাছে খাবার বিক্রি করেন। হোটেলের খাবারের তুলনায় উনার খাবার যথেষ্ট ভালো হয়।’

দোকানি নুর নবী বলেন, “আমি চিটাগাং রোডে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে আছি। ভাবির খাবার খাচ্ছি সাত বছরের বেশি হবে। উনার খাবার খুব ভালো হয়। মজার বিষয় হচ্ছে উনার নাম এখনো জানি না। শুধু ‘ভাবি’ হিসেবেই চিনি।”

এসআর/এমএস

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow