৯ মাসে তিনজন বদলি, এলেন চতুর্থ ওসি

2 months ago 7

ময়মনসিংহ নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পৌঁছেছে তলানিতে। চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় নগরবাসী আতঙ্কে বসবাস করছেন। কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) একের পর এক প্রত্যাহার করা হলেও ফলাফল শূন্য। আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা।

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে এ পর্যন্ত তিনজন ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সর্বশেষ সোমবার (২৩ জুন) সন্ধ্যায় কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়। ওসি হিসেবে যোগদানের মাত্র ১৯ দিনের মাথায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়া সই করা আদেশে তার বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলাসহ আদেশ অমান্য করার বিষয় উল্লেখ করা হয়।

এরপর নতুন ওসি হিসেবে জেলার গফরগাঁও থানার ওসি মুহাম্মদ শিবিরুল ইসলামকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে জেলার পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম সই করা এক আদেশে তাকে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি হিসেবে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়।

জানা যায়, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ১৮ সেপ্টেম্বর অতিরিক্ত আইজি (ফিন্যান্স) আবু হাসান মুহম্মদ তারিক সই করা এক চিঠিতে ময়মনসিংহ রেঞ্জের ৩২ পুলিশ কর্মকর্তাকে নৌ-পুলিশ, টুরিস্ট, সিআইডি, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, হাইওয়ে ও পিবিআই পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরে বদলি করা হয়। পরে ২২ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ জেলা পুলিশ সুপার মো. আজিজুল ইসলাম সই করা এক অফিস আদেশে জেলার ১২টি থানায় ১৫ জন পুলিশ কর্মকর্তাকে নতুন করে পদায়ন করা হয়। নতুন পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে মো. সফিকুল ইসলাম খানকে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়।

পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ময়মনসিংহের থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলি ও পদায়নের মধ্য দিয়ে পুলিশ কর্মমুখর হয়ে উঠে থানার কার্যক্রম ও সেবাপ্রার্থীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরে আসে। তবে চলতি বছরের ৫ মে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট-২ শাখা থেকে এআইজি মো. মিনহাজুল আলম সই করা চিঠিতে কোতোয়ালী মডেল থানার মো. সফিকুল ইসলাম খানসহ আরও ৫ পুলিশ কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।

এরপর ১৮ মে পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম সই করা এক আদেশে জেলার ভালুকা মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মিজানুর রহমানকে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করা হয়। পরদিন মিজানুর রহমান থানায় যোগদান করন। কিন্তু তিনি ছিলেন নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় বিএনপি নেতা নুরনবী বাচ্চুর দায়ের করা একটি মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি। এটি জানতেন না স্থানীয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। থানার ওসি হিসেবে পদায়নের পর পরই ঘটনাটি জানাজানি হলে সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরে ২২ মে বিকেলে ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আখতার উল আলম সমালোচনার মুখে তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোজড (সংযুক্ত) করেন।

চলতি মাসের ৪ জুন এ থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করেন মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন। তিনি যোগদানের পর থেকেই নগরীতে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়ে যায়। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

অব্যাহতভাবে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিলসহ মানববন্ধন করেন বাংলাদেশ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড অনার্স অ্যাসোসিয়েশন ময়মনসিংহসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও। তবুও অব্যাহত ছিল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। মাত্র ১৯ দিনের মাথায় সোমবার (২৩ জুন) সন্ধ্যায় তাকে ময়মনসিংহ পুলিশ লাইন্সে প্রত্যাহার করা হয়। একইসঙ্গে প্রত্যাহার করা হয় থানার দুজন উপ-পরিদর্শককেও।

প্রত্যাহার আদেশে বলা হয়, অত্র রেঞ্জাধীন ময়মনসিংহ জেলায় কর্মরত নিম্নবর্ণিত নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক/এসআইদের কর্তব্যকর্মে অবহেলা, কর্তৃপক্ষের বৈধ আদেশ অমান্য তথা অসদাচরণের দায়ে প্রশাসনিক কারণে তাদের নামের পার্শ্বে বর্ণিত জেলা/ইউনিটে সংযুক্ত করা হলো।

ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আবু বকর সিদ্দীক প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ময়মনসিংহ নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব শামসুদ্দোহা মাসুম বলেন, নগরীতে নিয়মিত চুরি, ছিনতাইসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলছে। এখন দিনেও মানুষ অনিরাপদ। এমতাবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। তা না হলে, নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক কমবে না।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, অপরাধীদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। গোয়েন্দা তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। মানুষদের নিরাপদে রাখতে পুলিশের চেষ্টার কমতি নেই।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এমএন/এমএস

Read Entire Article