জীবন পাল
চিকিৎসা ও সেবার মাধ্যমে অসুস্থ প্রাণীর সেবায় নিয়োজিত এক তরুণ। বাইসাইকেল চালিয়ে ঘুরে ঘুরে অসুস্থ কুকুরকে ওষুধ ও সেবা দিয়ে থাকেন। বলছিলাম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার প্রাণীদের সেবা নিয়ে কাজ করা দেবজ্যোতি চক্রবর্তী দীপের কথা। যে এসব প্রাণীর পাশে দাঁড়ানোকে নিজের কর্তব্যে পরিণত করেছেন। অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসাসহ সেবা দিচ্ছেন নিজ উদ্যোগে।
শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে চাকরি করেন দীপ। চাকরি করলেও মন-প্রাণ যেন সেসব প্রাণীর কাছে। চাকরি করে মাস শেষে পাওয়া সেলারির বড় অংশটা ব্যয় করেন প্রাণীর চিকিৎসার পেছনে। তার এ কাজে উৎসাহ দিতে মাঝেমধ্যে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব ও বড় ভাই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। নিজের জন্মদিনে ভালো কাজের অংশ হিসেবে বিভিন্ন এলাকার ১০টি কুকুরকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের ‘মন্টি’ ও পিচের মুখের ‘বিট্টু’ ছিল।
২০১৮ সাল থেকে অসুস্থ প্রাণীর চিকিৎসা দিয়ে আসছেন দীপ। কুকুর ছাড়াও ঘুঘু, শালিক, চড়ুই, কাঠবিড়ালি, বিড়াল ও বানরও আছে। অনেকেই ভালো কাজে আর্থিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেন। দীপ অন্যের সহায়তা না নিয়ে নিজের টাকা থেকেই ওষুধ ও খাবার কেনার মধ্য দিয়ে এ কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন। দীপের ভালো কাজের আরেকটি উদাহরণ হলো শুক্রবার যেসব পর্যটক শ্রীমঙ্গল ঘুরতে এসে পরিবেশ নোংরা করেন, পরদিন দীপ সেসব পরিষ্কার করেন। যাতে নিজের পর্যটন এলাকাটি সুন্দর ও পরিপাটি থাকে।
আরও পড়ুন
দীপ শহরের একজন সাইক্লিস্ট হিসেবে পরিচিত। সাইক্লিংয়ের সময় পর্যটকদের সচেতন করার জন্য দর্শনীয় জায়গায় গিয়ে নিজ উদ্যোগে ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন। শ্রীমঙ্গলের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা সফরে আসেন শিক্ষার্থীরা। তারা যেখানে-সেখানে খাবারের প্লেট, প্যাকেট, পানির বোতলসহ ময়লা-আবর্জনা ফেলে যান। সেসব পরিষ্কার করে সচেতনতা তৈরি করা দীপের অন্যতম কাজ। যা জনমনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। নিজের ভালো কাজ দিয়েই সবার কাছে সুপরিচিত এ তরুণ।
কখনো শহরের পাড়া-মহল্লায়, কখনো গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে, কখনোবা চা বাগানের লাইনে সাইকেল চালিয়ে হাজির হন তিনি। উদ্ধার করেন বিপদে পড়া, অসুস্থ হয়ে পড়া কোনো এক প্রাণীকে। দেন চিকিৎসা, করেন সেবা। কিছুদিন আগেই হঠাৎ খবর আসে, একটি কাক আহত অবস্থায় পড়ে আছে রাস্তায়। দীপ তার বাইসাইকেল নিয়ে ছুটে গেলেন কাকটিকে উদ্ধার করতে। আহত কাককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তুলে দিলেন বন অধিদপ্তরের কর্মীর হাতে। যাতে বন কর্মীর কাছে কাকটি নিরাপদে অসুস্থ সময়টা কাটাতে পারেন। তারপর বন কর্মী কাকটিকে মুক্ত আকাশে ছেড়ে দেবেন।
এসব প্রাণীও দীপকে আপন করে নিয়েছে। তাকে দেখামাত্র ছুটে আসে পাশে। আপন মানুষকে কাছে পেয়ে যেন খেলায় মেতে ওঠে। এর মধ্যেই দীপের কাজ সীমাবদ্ধ নয়। কয়েক বছর আগে থেকেই গাছ লাগানোর মৌসুমে নিজ উদ্যোগে প্রতি সপ্তাহে একটি করে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেন। গাছ যে কত উপকারী বন্ধু, সেটি বোঝাতে একটি সচেতনতামূলক ভিডিও তৈরি করেন। ভিডিওতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, ‘আজকের রোপণ করা চারাটি পনেরো বছর পর একটি ছায়াবৃক্ষে পরিণত হবে। আপনার পরবর্তী প্রজন্মকে ছায়া দিয়ে সুরক্ষা করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
এসইউ/এমএস