ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি বাড়ছে

13 hours ago 7

ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন থেকে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের ফলাফলের নির্দিষ্ট মানদণ্ড পূরণ করতে পারলেই টিউশন ফি বাড়াতে পারবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।

সোমবার (২০ অক্টোবর) শিক্ষামন্ত্রী ব্রিজেট ফিলিপসন সংসদে জানান, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষসহ পরবর্তী দুই বছর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর টিউশন ফি মুদ্রাস্ফীতির হারে বাড়বে। তবে এই বৃদ্ধির সুযোগ শুধু সেইসব প্রতিষ্ঠান পাবে, যারা ‌‘কঠোর মানদণ্ড’ পূরণ করবে—যার মধ্যে থাকবে উচ্চমানের পাঠদান, শিক্ষার্থীদের সার্বিক সহায়তা এবং উন্নত ফলাফল নিশ্চিত করা।

সরকারের প্রকাশিত নতুন ‘পোস্ট-১৬ শিক্ষা ও দক্ষতা শ্বেতপত্রে’ বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে প্রতি বছর টিউশন ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমন্বয় করা হবে, তবে এটি নির্ভর করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান ও পারফরম্যান্সের ওপর।

ফিলিপসন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি সর্বোচ্চ ফি নিতে চায়, তবে তাদের বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে হবে। আমাদের সংস্কারগুলো শিক্ষার্থীদের অর্থের যথাযথ মূল্য নিশ্চিত করবে এবং শিক্ষার মান আরও উন্নত করবে।’

এ বছর সেপ্টেম্বরেই আট বছর পর প্রথমবারের মতো ইংল্যান্ডে টিউশন ফি বেড়েছে, যা এখন প্রতি শিক্ষার্থীর বার্ষিক গড় ৯ হাজার ৫৩৫ পাউন্ডে পৌঁছেছে। তবে ইংল্যান্ডের উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানিয়েছে, সরকারের আর্থিক সহায়তা না পেলে ৪৩ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় লোকসানে পড়বে।

ছাত্রছাত্রীদের জীবিকা ব্যয়ের চাপ কমাতে রক্ষণাবেক্ষণ ঋণপ্রতি বছর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়ানো হবে। নিম্ন আয়ের পরিবারের শিক্ষার্থীরা এর মাধ্যমে সর্বাধিক আর্থিক সহায়তা পাবে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি সতর্কবার্তা দিয়ে ফিলিপসন বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান মানসম্মত শিক্ষা দিতে ব্যর্থ, তারা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নিতে পারবে না।

এছাড়া সরকার ঘোষণা করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ফ্র্যাঞ্চাইজি ব্যবস্থায় কড়াকড়ি আনা হবে—যেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় অন্য প্রতিষ্ঠানকে তার হয়ে কোর্স পরিচালনার অনুমতি দেয়। এতে সরকারি অর্থের অপব্যবহার ও ভর্তি এজেন্টদের অনিয়ম রোধ করার লক্ষ্য রয়েছে।

প্রধান নির্বাহী ভিভিয়েন স্টার্ন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আজকের শ্বেতপত্র আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় একটি নতুন সূচনা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জাতীয় সম্পদ, তাদের টিকে থাকতে হবে সর্বোচ্চ সক্ষমতায়।’

সরকারের এই সংস্কার পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে, পেশাভিত্তিক শিক্ষাকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য “V-level” নামে নতুন কোর্স চালু হবে, যা বিদ্যমান A-level ও T-level–এর পাশাপাশি চালু থাকবে। তবে এর ফলে BTEC–এর মতো জনপ্রিয় কোর্সগুলো বাদ পড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শিক্ষাবিদেরা।

ওয়েস্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার আরউইন মন্তব্য করেন, ‘পেশাভিত্তিক শিক্ষা সামাজিক গতিশীলতার মূল চাবিকাঠি। কিন্তু এই পরিবর্তনগুলো বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করতে পারে।’

এছাড়া, নতুন নীতিমালায় গণিত ও ইংরেজিতে GCSE পুনঃপরীক্ষা (resit)–এর বাধ্যবাধকতা সহজ করার পরিকল্পনাও রয়েছে। যারা পাস নম্বর (গ্রেড ৪) অর্জন করতে ব্যর্থ হবে, তাদের জন্য ‘স্টেপিং স্টোন’ নামে নতুন প্রস্তুতিমূলক কোর্স চালু করা হবে যেন তারা পরবর্তী পরীক্ষার জন্য ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে।

সার্বিকভাবে, সরকারের এই নতুন শিক্ষা সংস্কারকে অনেকেই উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার আর্থিক স্থিতিশীলতা ও মান উন্নয়নের ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।

এমআরএম/জেআইএম

Read Entire Article