ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ওষুধ সংকট, ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

3 hours ago 3

নানা সমস্যায় ধুঁকছে নাটোরের কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলার মানুষ। বিশেষ করে দরিদ্র ও অসহায় মানুষেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন

নাটোর সিভিল সার্জন কার্যালয় ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ৩৮টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ১৫১ কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে জ্বর, সর্দি, কাশি,আঘাতজনিত ব্যথা, বিভিন্ন সংক্রামক রোগ, প্রসূতি সেবা, জন্মনিয়ন্ত্রণসহ নানা ধরনের চিকিৎসাসেবা পান গ্রামের মানুষ। কিন্তু ২০২৪ সাল থেকে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ কমে গেছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী বিতরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে ২৫-২৭ ধরনের ওষুধ সরকারিভাবে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। গতমাসে কিছু ওষুধ পাওয়া গিয়েছিল, যা বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ওষুধ সংকট লেগেই রয়েছে।

সরেজমিনে নাটোর সদর উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসহ কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা যায়, সেখানে আসা রোগীর সংখ্যা খুবই কম। কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানান, এসব চিকিসা কেন্দ্রে ওষুধ পাওয়া যায় না। ফলে বাধ্য হয়ে তারা অন্যত্র চিকিৎসা করাচ্ছেন।

কথা হয় দীঘাপতিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে আসা বৃদ্ধ নওপাড়া গ্রামের কোরবান আলীর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‌‘এখানে আসার পর ডাক্তার প্রেসক্রিপশন দিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজন ওষধ পাইনি। এসব ওষুধ বাজার থেকে কিনতে হবে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে আরেক রোগী রহিমা বেগম বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন নিয়ে কী করবো, ওষুধতো পাইনি। ওষুধ কেনার মতো টাকাতো আমার কাছে নেই।এখন দেখি ছেলেমেয়েকে বলে তারা টাকা দেয় কি-না।’

কথা হয় ওই কেন্দ্রের চিকিৎসক আব্দুল মান্নাফের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ওষুধ সরবরাহ নেই বললেই চলে। গতমাসের সামান্য কিছু ওষুধ পেয়েছিলাম, সেটাও শেষ হয়ে গেছে।’

লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, জ্বরজনিত কারণে একটি সিরাপ ভেঙে তিনজন শিশুর মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে। বাকি কোনো ওষুধ নেই বললেই চলে। এমনকী জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীরও অভাব রয়েছে।

ওই এলাকার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জানান, দীর্ঘদিন ধরে তারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে ওষুধ পাচ্ছেন না। ফলে উপজেলা সদর অথবা জেলা সদরে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।

বিষয়টি স্বীকার করে নাটোরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মুক্তাদির আরেফিন জানান, ওষুধ সরবরাহ না থাকায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে স্থানীয়রা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার জানানো হয়েছে।

নাটোর পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল আজিম বলেন, দীর্ঘদিন ওষুধ সরবরাহ বন্ধ থাকার পর গতমাসে কিছু ওষুধ পেয়েছিলাম। সেগুলো দিয়ে কোনোরকম সেবা দেওয়া হচ্ছে। ওষুধ সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

রেজাউল করিম রেজা/এসআর/জিকেএস

Read Entire Article