ইউনূস সরকার যত দিন আছে, ততদিন পুলিশ ধরবে না- এমন আশ্বাস দিয়ে ময়মনসিংহের ফুলপুরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া ওবায়দুল হক নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার (৭ মার্চ) জুমার নামাজের পর শওকত আলীর বাসায় এই ভিডিও ধারণ করা হয়। কোনো পুলিশ শফিউল আলমকে গ্রেফতার করবে না এমন আশ্বাস দিয়ে এসময় ৫ হাজার টাকা নেন ওবায়দুল।
অভিযুক্ত ওবায়দুল উপজেলার সখল্যা গ্রামের বাসিন্দা। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার নাম শফিউল আলম। তিনি উপজেলার ভাইটকান্দি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলীর ছেলে।
ছড়িয়ে পড়া ৪ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, সোফায় পাঞ্জাবি-টুপি পরে বসে আছেন যুবক ওবায়দুল হক। শওকত আলীর উদ্দেশে শফিউল আলমকে বলতে শোনা যায়, ‘৫ হাজার টাকা দিলে ওবায়দুল বলছে, ওসি সাহেব আমারে ধরত না। হে ওসি সাহেবের লগে কথা কইছে। ভাইটকান্দি ইউনিয়নের আনোয়ার দারোগাও ধরত না।’ টাকা নেওয়ার পর যে পুলিশ আসবে না, বিষয়টি বুঝে টাকা নেওয়ার জন্য বলা হয় ওবায়দুলকে।
এ সময় ওবায়দুলকে বলতে শোনা যায়, ‘ইউনূস সরকার যত দিন আছে, আর আমি যত দিন বাঁইচ্চা আছি, এইডা আমি গ্যারান্টি দিলাম। আমি যদি তার (শফিউল) বিপক্ষেই থাকতাম, তাহলে ফোন দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। সামনে ১০ রোজার পরে ওসি সাহেবরে দাওয়াত দিছি।’
এসময় বারবার শফিউলের মাকে বলতে শোনা যায়, ‘পরে কোনো সমস্যা হইত না তো?’ জবাবে ওবায়দুল বলেন, ‘আমি তো আছি, এক কথা কতবার বলতাম।’ এরপর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শওকত আলী এক হাজার টাকার ৫টি নোট এনে ওবাদুলের হাতে তুলে দেন।
এদিকে সমন্বয়ক পরিচয়ে টাকা নেওয়ার ঘটনা জানাজানি হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, ওবায়দুল নামে ওই যুবক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। তারা তাকে পুলিশে দিতে বলেন।
স্থানীয় আব্দুল হাদি নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, ওবায়দুল এলাকায় সমন্বয়ক হিসেবে পরিচয় দেন। সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছে বলে নিজেই সবাইকে বলে বেড়ান। একজনকে গ্রেফতার থেকে রক্ষা করতে টাকা নিচ্ছেন। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। টাকা নেওয়ার ঘটনাটি খুবই নিন্দনীয়।
এ বিষয়ে শওকত আলী বলেন, আমাদের প্রতিবেশী ওবায়দুল নিজেকে এলাকায় সমন্বয়ক পরিচয় দেন। আমি জুমার নামাজ পর ঘরে এসে বসতেই আমার ছেলেকে পুলিশ ধরবে না, ইউনূস সরকারের আমলে কোনো মামলা হবে না, এসব বলে পাঁচ হাজার টাকা নেন ওবায়দুল। এটি ভিডিও করে রেখে দিয়েছি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ওবায়দুল হকের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। জাগো নিউজের পরিচয় দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহের সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, এখন আর কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিতে পারবে না। এছাড়া ওই যুবক (ওবায়দুল) আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ফুলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল হাদি বলেন, পুলিশের কথা বলে টাকা নেওয়া যুবককে শনাক্ত করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
কামরুজ্জামান মিন্টু/এমএন/এমএস