ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজা সিটিতে অবস্থানরত ফিলিস্তিনিদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এখনই চলে যাও। অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বেসামরিক নাগরিকদের ‘গণহত্যা’ এবং জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রবেশে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক সোমবার বলেন, ইসরায়েল অপরাধের পর অপরাধ করছে এবং গাজার ধ্বংসযজ্ঞের পরিমাণ বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) বিচারের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। জানুয়ারিতে আদালতের দেওয়া রায় অনুযায়ী তেল আবিবকে গণহত্যা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল।
গাজায় ‘হত্যাযজ্ঞ বন্ধের’ আহ্বান জানিয়েছেন ভলকার তুর্ক। এদিকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজা সিটি ধ্বংস এবং এই উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগরকেন্দ্র ও শহরে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ধ্বংসযজ্ঞ ও হতাহত
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, রোববার সকাল থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫০টির বেশি ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও ১০০টি ভবন। সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল অভিযোগ করেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে আশ্রয়হীন মানুষের তাঁবুর পাশের আবাসিক ভবনে হামলা চালাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ২০০টির বেশি তাঁবু ধ্বংস হয়েছে।
তিনি জানান, উদ্ধারকর্মীরা গাজা নগরীর তুফাহ এলাকায় ধ্বংসস্তূপ থেকে এখনও লোকজনকে উদ্ধার করছেন। আজ-জারকা জেলায় ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মসজিদ ও খেলার মাঠও টার্গেট করা হয়েছে।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেন, একটার পর একটা উঁচু ভবন ধসে পড়ছে, এটা হৃদয়বিদারক। শুধু ভবন নয়, মানুষের মৌলিক সেবাগুলোও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, যা দুই বছরের যুদ্ধের পর বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
মৃত্যু ও দুর্ভিক্ষ
স্থানীয় হাসপাতালগুলো জানিয়েছে, সোমবার একদিনেই অন্তত ৫২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৩২ জন গাজা সিটির। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ক্ষুধা ও মারাত্মক অপুষ্টিতে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন শিশুও রয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক ওসামা বালুশাও রয়েছেন। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেন, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ২৫০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন যাদের সবাই ফিলিস্তিনি। কারণ ইসরায়েল বিদেশি সংবাদকর্মীদের গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না। এটি আধুনিক ইতিহাসে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উত্তর গাজায় একটি ট্যাঙ্কের নিচে রাস্তায় বোমা বিস্ফোরণে তাদের চারজন সেনা নিহত হয়েছে।
তথাকথিত ‘মানবিক এলাকা’তেও বোমা
সোমবার ইসরায়েল নতুন করে হুমকি দিয়ে গাজার বাসিন্দাদের জানায়, গাজা নগরীর জামাল আবদেল নাসের সড়কের নির্দিষ্ট একটি ভবন ও আশপাশের তাঁবু খালি না করলে তাদের মৃত্যু হবে। তাদের বলা হয়, দক্ষিণ গাজার সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা আল-মাওয়াসিতে যেতে।
কিন্তু আল-মাওয়াসি এলাকাতেও বারবার বোমা বর্ষণ হয়েছে, যদিও ইসরায়েল এটাকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ দাবি করে আসছে। বছরের শুরুতে প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ সেখানে থাকত। এখন সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, এই সংখ্যা ৮ লাখ ছাড়িয়েছে অর্থাৎ গাজার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ সেখানে গাদাগাদি করে আছে।
টিটিএন