ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অন্টোপ্রোনরশিপ ডেভেলপমেন্টের (সিইডি) সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এডব্লিউই প্রোগ্রাম সম্পন্নকারী ৯০ উদ্যমী নারী উদ্যোক্তার সাফল্য উদ্যাপন করেছে। রোববার (১৭ নভেম্বর) সার্জে দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগানবোল্ডিন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। একই সঙ্গে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। যা জেন্ডার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং দেশের ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সফল নারী উদ্যোক্তাদের কৃতিত্বকে সম্মান জানানো হয়। যারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত এডাব্লিউই প্রোগ্রামের দ্বিতীয় পর্যায় সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। উদ্যোক্তারা সিলেট, কুমিল্লা, বরিশাল, খাগড়াছড়ি, যশোর, চট্টগ্রাম এবং ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন।
সার্জে দ্য অ্যাফেয়ার্স মেগান বোল্ডিন বলেন, এ বছর একাডেমি ফরউইমেন অন্টোপ্রোনরস (এডাব্লিউই) প্রোগ্রাম সম্পন্নকারী অসাধারণ নারীদের অভিনন্দন। আপনারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রমাণ করছেন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছেন।
অনুষ্ঠানে প্রোগ্রামের সর্বশেষ পর্যায়ের ছয়জন সেরা বিজয়ী তাদের ব্যবসায়িক প্রস্তাবনার জন্য পুরস্কৃত হন। সার্জে দ্য অ্যাফেয়ার্স বোল্ডিন আরও ঘোষণা করেন যে এডব্লিউই প্রোগ্রামের সব পর্যায়ের ১৪০ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ব্যবসায়িক প্রস্তাবনা প্রতিযোগিতা আয়োজনের জন্য অতিরিক্ত ৩০ হাজার ডলার অনুদান দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, আমরা এই অর্থায়ন ঘোষণা করতে পেরে আনন্দিত, যা সব কোহোর্টের নারীদের মধ্যে ৫ হাজার ডলারেরও বেশি মূল্যের পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগিতা করার সুযোগ করে দেবে। যা তাদের উদ্যোক্তা কার্যক্রমকে আরও উৎসাহিত করবে।
অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণীর পাশাপাশি ছিল মেলা এবং প্রদর্শনীর আয়োজন। যেখানে অংশগ্রহণকারীরা তাদের তৈরি পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করেন, যা প্রোগ্রামের মাধ্যমে অর্জিত উদ্যোক্তা দক্ষতাকে তুলে ধরে। অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী থেকে এসেছেন, তাদের দৃঢ়তা ও সংকল্প তাদের উদ্যোক্তা যাত্রায় প্রতিফলিত হয়েছে।
এডব্লিউই প্রোগ্রাম, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ, যা নারীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক জ্ঞান ও দক্ষতা সরবরাহ করে। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির থান্ডারবার্ড স্কুল অব গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট এবং ফ্রিপোর্ট-ম্যাকমোরান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় পরিচালিত এই প্রোগ্রামটি ড্রিমবিল্ডার প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে অনলাইন শিক্ষা সংক্রান্ত উপকরণ এবং সফট স্কিল প্রশিক্ষণ প্রদান করে।
এই বছরের কোহোর্টে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের ৯০ জন অংশগ্রহণকারী অন্তর্ভুক্ত ছিলেন, যেখানে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল আদিবাসী, সংখ্যালঘু এবং আর্থিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত পটভূমি থেকে আসা নারীদের। তিন মাসব্যাপী কোর্সটি যা বাংলায় ইন্ডাস্ট্রি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত, টেকসই উন্নয়ন, পিয়ার-টু-পিয়ার শেখা এবং নেটওয়ার্কিংয়ের ওপর জোর দেয়-যা ব্যবসার বৃদ্ধির জন্য একটি মজবুত ভিত্তি গড়ে তোলে।
বোল্ডিন বলেন, এডব্লিউই প্রোগ্রামের কাজ শুধুমাত্র উদ্যোক্তা তৈরিই নয়; অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নও এর লক্ষ্য। যখন নারীরা ব্যবসায় সফল হয়, তখন তাদের পরিবার, সমাজ এবং অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অন্টোপ্রোনরশিপ ডেভেলপমেন্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এই অংশীদারত্ব, প্রান্তিক নারীদের উদ্যোক্তা কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা এবং বাংলাদেশে ছোট ও মাঝারি শিল্পের (এসএমই) বিকাশে সহায়তা করার ক্ষেত্রে টেকসই প্রোগ্রাম বাস্তবায়নের জন্য একটি অভিন্ন প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন।
এডব্লিউই উদ্যোগটি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জেন্ডার সমতা এবং সমান সুযোগ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যা নারীদের পূর্ণ অর্থনৈতিক অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে এবং একটি ভবিষ্যতের জন্য সহায়ক যা নারীরা বৈচিত্র্যময় পটভূমি থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং তাদের সমাজ ও শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়।
আইএইচআর/এমআইএইচএস/এএসএম