ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতি নদীর তীররক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধস দেখা দিয়েছে। ফলে তীরবর্তী শতাধিক পরিবারের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার গোপালপুর ও টগরবন্দ ইউনিয়নের মাঝামাঝি চর আজমপুর এলাকায় ডান তীর রক্ষায় ৩০০ মিটার বাঁধের নির্মাণ কাজ করছে মেসার্স লিটন মল্লিক নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এখনো পুরোপুরি কাজ শেষ হয়নি। কিন্তু টানা বৃষ্টিতে বাঁধের আনুমানিক ৩০ মিটার ধসে পড়েছে। এতে সিসি ব্লকগুলো পর্যায়ক্রমে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাজের মান শুরু থেকে নিম্নমানের। কাজের তদারকি ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় এবং যথাযথ ডাম্পিং না করে সিসি ব্লক বসানোর কারণে বৃষ্টির পানিতেই বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তারা এখনো কাজ বুঝে পায়নি। কাজে অনিয়ম হলে তার দায়ভার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ফরিদপুরে ‘মধুমতি নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ শিরোনামে ২০২৩ সালের ৬ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪৮১ কোটি ১০ লাখ টাকা। যা ২৮টি প্যাকেজে বর্তমানে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী এলাকায় সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পাউবোর তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাস্তবায়নে ২ নং প্যাকেজের আওতায় আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর এলাকায় ৩০০ মিটার বাঁধ নির্মাণের কাজ পায় মেসার্স লিটন মল্লিক নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. হান্নান শেখ বলেন, কাজ শেষ না হতেই সামান্য বৃষ্টির পানিতেই বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। কাজের মান ও সঠিকভাবে তদারকির অভাবে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত তীর সংরক্ষণ বাঁধ মেরামত করা না হলে শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মোসাম্মৎ শেফালী সুলতানা বলেন, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। এখন দেখি কাজ শেষের আগেই নদীতে বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। আমাদের এখন কি হবে। আর সরকারি লাখ লাখ টাকা জলে যাবে।
জানতে চাইলে মেসার্স লিটন মল্লিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, হঠাৎ করে গত কয়েকদিন নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধের কিছু অংশ ধসে গেছে। ধসে যাওয়া অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর প্রস্তুতি চলছে। নদীর পানি কমলে নতুন করে মেরামত করে দেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন বলেন, আমাদের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কথা হয়েছে। কাজ চলমান। বাঁধের ধসে যাওয়া অংশের কাজ নতুন করে করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কাজে কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
এন কে বি নয়ন/জেডএইচ/জেআইএম