‘কেউ খুশি হয়ে কিছু দিলে সেটা চাঁদাবাজি নয়’

3 months ago 7

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকায় পদ্মা সেতুর কাছাকাছি পৌলান মোল্লা এলাকায় যাত্রাবিরতি করা শত শত বালুবাহী বাল্কহেড থেকে প্রতিদিন লাখ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র এবং পুলিশের কিছু সদস্য এ চাঁদাবাজিতে জড়িত বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। যদিও পুলিশ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অভিযুক্তদের একজন সুরুজ মাতবর বলেন, ‘আমরা শুধু খুঁটি দিয়ে বাল্কহেডগুলো বেঁধে রাখতে সাহায্য করি এবং পাহারা দেই। এজন্য কেউ খুশি হয়ে কিছু টাকা দিলে, সেটা চাঁদাবাজি নয়।’

বাল্কহেডের সুকানি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যমুনা নদী থেকে বালুবোঝাই করে প্রতিদিন শত শত বাল্কহেড পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায়। এ যাত্রাপথে বালুবাহী বাল্কহেডগুলো পদ্মা সেতু থেকে আনুমানিক দুই কিলোমিটার ভাটিতে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট ‘জিরো পয়েন্টে’ যাত্রাবিরতি করে। 

তারা রাতভর অবস্থান করার পর ভোরে আবার গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা হয়। নদীর পাড়ে রাতের অন্ধকারে চলছে চাঁদা-বাণিজ্য। এতে যেমন নদীভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। 

স্থানীয়দের দাবি, প্রশাসন যেন দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে পদ্মাপাড়ে বাল্কহেড ভেড়ানো বন্ধ করে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়। 

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রতি রাতে এসব বাল্কহেড নিরাপদে পাড়ে ভিড়াতে সাহায্য করার নামে স্থানীয় সুরুজ মাতবর, জসিম মাতবর, শাজাহান চৌকিদার, রাজ্জাক চৌকিদারসহ একটি চক্র প্রতিটি বাল্কহেড থেকে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছে। এ চাঁদাবাজি কার্যক্রমে মাঝিরঘাট নৌফাঁড়ি ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার কিছু পুলিশ সদস্যও জড়িত। 

শনিবার (১০ মে) সন্ধ্যায় সরেজমিন দেখা যায়, পদ্মার পাড়ে শত শত বালুবাহী বাল্কহেড ভিড়ছে। 

স্থানীয় বাসিন্দা বাচ্চু ফরাজি বলেন, ‘প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত একে একে শত শত বাল্কহেড এখানে আসে এবং ভোর হলে আবার ছেড়ে যায়। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি প্রতিটি বাল্কহেড থেকে চাঁদা নিয়ে তাদের এখানে ভেড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। নৌফাঁড়ি ও থানার কিছু পুলিশ সদস্যও প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এসে টাকা নিয়ে যান।’

স্থানীয় হাজি কাশেম মাতবর বলেন, ‘প্রতিদিন রাতে যখন এত বাল্কহেড পাড়ে ভেড়ে, তখন পুরো পাড় যেন কেঁপে ওঠে। আমরা আতঙ্কে থাকি, কখন জানি আমাদের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।’ 

সাবেক ইউপি সদস্য মঙ্গল মাতবর জানান, ‘প্রায় ৫০০ পরিবার নদীপাড়ে বসবাস করছে। বাল্কহেড ভেড়ার কারণে তারা সবসময় আতঙ্কে থাকে।’

রিয়াজুল নামে এক বাল্কহেড সুকানি বলেন, ‘আমরা যমুনা থেকে বালু এনে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। এখানে রাত কাটালে স্থানীয় কয়েকজন এসে আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। কখনো ২০০ আবার কখনো আরও বেশি দেওয়া লাগে।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার এসআই ফুয়াদ বলেন, ‘আমরা নিয়মিত টহলের অংশ হিসেবে এখানে এসেছি। কেউ কোনো ঝামেলা করছে কি না, দেখতে আসা। চাঁদাবাজির বিষয়ে কিছু জানি না।’

জাজিরার মাঝিরঘাট নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোশারফ হোসেন বরেন, ‘আমার ফাঁড়ির কেউ এ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়। বরং আমরা সবসময় সচেতন থাকি যেন কেউ চাঁদাবাজি না করতে পারে। যদি কারও বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির প্রমাণ পাওয়া যায় অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আকরাম হোসেন বলেন, ‘পদ্মা সেতু সংলগ্ন ভাঙনপ্রবণ এলাকায় যেন কোনো বাল্কহেড না ভেড়ে, তা নিশ্চিত করতে আমরা দায়িত্ব পালন করছি। পুলিশ সদস্যদের চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তবে কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Read Entire Article