ক্রিকেট দুর্নীতি রোধে যেসব কাজ করবেন অ্যালেক্স মার্শাল

2 weeks ago 7

মাঝে মধ্যে ঘরোয়া ক্রিকেটে ছোটখাট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠলেও পাকিস্তানের মতো ঢালাও ম্যাচ আর স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে কখনোই সয়লাব হয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেট অঙ্গন। তারপরও আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে দিনকে দিন ক্রিকেট দুর্নীতি ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে স্পট ফিক্সিংয়ের গন্ধ নাকে এসে লাগছে অনেকের।

দেশের একমাত্র ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট বিপিএলের সর্বশেষ আসরে বড় ধরনের স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠেছিল। বিসিবির দুর্নীতি দমন সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদনেও নাকি তার সত্যতা মিলেছে। এ সম্পর্কে দেশের শীর্ষ পত্রিকায় এক প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে। সেই সময়ে যখন দেশের ক্রিকেট অঙ্গন তোলপাড়, ঠিক তখনই বাংলাদেশে পা রেখেছেন বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির দুর্নীতি দমন সংস্থার সাবেক প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল।

গতকাল ১৮ আগস্ট বাংলাদেশে এসেছেন অ্যালেক্স মার্শাল। রাতটুকু পার করে আজ ১৯ আগস্ট হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে তার ‘প্রেজেন্টেশন’ দিলেন বিসিবির দুর্নীতি দমন সংস্থা ‘আকু’র নতুন পরামর্শক অ্যালেক্স মার্শাল।

তিনি এসেছেন বিসিবির দুর্নীতি দমন সংস্থা আকুর পরামর্শক হিসেবে। বিসিবি থেকে আগেই তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে অ্যালেক্স মার্শাল আসলে কী করবেন? তার কাজের ধরন কী হবে? কাদের সঙ্গে কীভাবে কাজ করবেন? তার মূল ভূমিকা কী হবে? এসব জানতে কৌতূহলী ক্রিকেট অনুরাগীরা।

আজ দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই যুক্তরাজ্যের এ সাবেক পুলিশকর্তা নিজেই সব জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি কেন বাংলাদেশে এসেছেন, সে প্রশ্নের জবাবে অ্যালেক্স মার্শালের ব্যাখ্যা, ‘আমি এখানে এসেছি বিসিবি প্রেসিডেন্ট এবং বোর্ডের সঙ্গে কাজ করার জন্য। একটি ইন্টেগ্রিটি ইউনিট তৈরি করতে, যা খেলার সব ধরনের ঝুঁকি থেকে ক্রিকেটকে রক্ষা করবে।’

অ্যালেক্স মার্শাল মনে করেন, মাঠে যে খেলাটা হচ্ছে সেটা যে পাতানো খেলা নয়, তার কোনো কিছুই আগে থেকে সাজানো নয়, ম্যাচের কোনো পর্যায়ই অনৈতিকতার ছোঁয়া নেই, কোনো অন্যায় নেই; যারা খেলাটা দেখেন, তাদের সে ধারণাটা নিশ্চিত করাই হবে তার প্রধান কাজ।

অ্যালেক্স বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট গত ২৫ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। এবং এখনই সঠিক সময়, যাতে যে কোনো ম্যাচ বা ইভেন্ট যেটা দর্শক দেখছে, তারা বিশ্বাস করতে পারেন যে মাঠে যা হচ্ছে, তা সঠিক এবং ন্যায়সঙ্গত।’

একই সঙ্গে, বাংলাদেশ দলের নারী ও পুরুষ ক্রিকেটারদের সব ধরনের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখার কাজেও ব্রত থাকতে চান এ ইংলিশ। মার্শাল জানান, খেলাধুলায় অনেক রকম ঝুঁকি আছে। ‘ডোপিং’ হচ্ছে অনেক বড় ঝুঁকি। বিশ্বের সব খেলাধুলার জন্য ডোপিং নিয়ন্ত্রণে সোচ্চার সব বিশ্ব সংস্থা।

এর বাইরে সেফগার্ডিং, হয়রানি অথবা শোষণের শিকার হওয়ার ঘটনাও ঘটে। কিন্তু ক্রিকেটে সবচেয়ে বড় ঝুঁকি আসে দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে, যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খেলোয়াড়দের লোভ দেখিয়ে খারাপ খেলার জন্য প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। অ্যালেক্স বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করব যে বাংলাদেশের পুরুষ ও নারী ক্রিকেটাররা সঠিকভাবে সুরক্ষিত থাকবেন।’

বিসিবি প্রধান ও বোর্ড পরিচালকদের সঙ্গে দেখা করে নিজের লক্ষ্য-পরিকল্পনা উপস্থাপন করা অ্যালেক্স মার্শাল আরও জানান, ‘আমি প্রেসিডেন্ট, সিইও এবং কিছু বোর্ড সদস্যের সঙ্গে দেখা করেছি। সবাই খেলাটিকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে অত্যন্ত একমত ছিলেন। আমরা একটি ইন্টেগ্রিটি ইউনিট তৈরি করব, যার মূল উদ্দেশ্য হবে সবাইকে শিক্ষা দেওয়া। তারা ঝুঁকি চিনতে শিখুক এবং কীভাবে সতর্ক থাকতে হয়, তা জানুক।’

তার লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা জানাতে গিয়ে এ দুর্নীতি দমন সংস্থার অভিজ্ঞ কর্তা বলেন, ‘জাতীয় দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতিবাজদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না দেওয়া হবে আমাদের কাজ। আমরা চাই না তারা এখানে আসুক। তাদের বের করে দেওয়া সম্ভব। এই ইউনিট একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে যে বাংলাদেশে ক্রিকেট হবে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ এবং বোর্ড ও প্রেসিডেন্ট সেই দৃষ্টিভঙ্গিকে সমর্থন করছেন।’

বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো ততটা নিরাপদ নয়। এই সব আসরে ক্রিকেট দুর্নীতি বাসা বাঁধার সুযোগ বেশি থাকে, এমনটাই মনে করেন মার্শাল। তাই তার কথা, ‘ক্রিকেটে সবসময় বড় ঝুঁকি থাকে সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে, যা দুর্বল বা অসুরক্ষিত মনে হতে পারে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে বিপিএল কখনও দুর্বল বা অসুরক্ষিত মনে না হয়। ইভেন্ট পরিচালনা, আর্থিক ব্যবস্থা, দল মালিকানা; সব কিছুই উচ্চমানের, পেশাদার এবং সুরক্ষিত হতে হবে।’

এদিকে বিসিবির দায়িত্বশীল এক কর্তা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতেই যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ফিরে যাবেন অ্যালেক্স মার্শাল। এরপর পুরোদস্তুর কাজ শুরু করার সময় আবার আসবেন।

এআরবি/এমএমআর/এএসএম

Read Entire Article