খাম ছাড়া চিঠি দেওয়ায় মহিলা কর্মকর্তাকে ধমকালেন জামায়াত কর্মী
নারী দিবস উপলক্ষে চিঠি দেওয়াকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের সালথায় উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ধমকিয়েছেন জামায়াতের এক কর্মী। সালথা উপজেলা জামায়াতের আমির ও সাধারণ সম্পাদককে খাম ছাড়া চিঠি দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইলে ফোন দিয়ে ধমকের সুরে নানা ধরনের কথা বলেন ওই জামায়াত কর্মী।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলির ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দিয়ে এমন কাণ্ড ঘটান ওয়ালি উজ জামান।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ব্যক্তি সালথা উপজেলা জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। এছাড়াও তিনি সালথা বাজারের ব্যবসায়ী ও স্কয়ার প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফেরদৌস আরা ডলি কালবেলাকে বলেন, নারী দিবস উপলক্ষে আমি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের চিঠি পাঠিয়েছি। জামায়াতের নেতাদের চিঠিটি ইউএনও অফিসের অফিস সহকারী নিতাইয়ের মাধ্যমে জামান সাহেবের দোকানে পাঠানো হয়। কারণ, আমার অফিসে লোকবল সংকট রয়েছে। ব্যস্ততার কারণে চিঠিটির খাম দেওয়া হয়নি। খাম না দেওয়ায় ওই অফিস সহকারীকে তাৎক্ষণিক হেনস্তা করা হয়। পরে আমার মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ধমকান যে- কেন খাম ছাড়া চিঠি দিলাম।
তাদের কথাপোকথনের একটি কলরেকর্ড এ কালবেলার হাতে আসে। কলরেকর্ডটিতে খাম ছাড়া চিঠি দেওয়ায় জামায়াতকর্মীকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শোনা যায়। ওই জামায়াত কর্মী জানতে চান, কেন খাম ছাড়া চিঠি দেওয়া হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘কোথায় কী জিনিস পাঠাতে হয়, কেমনে চিঠিপত্র পাঠাতে হয় বুঝতে পারেন না? রাজনৈতিক নেতাকে চিঠি দিতে হলে খামে দিতে হয়। খামের টাকা নাই? বরাদ্দের টাকা কোথায় যায়?
তিনি আরও বলেন, ‘টাকা, বিল-ভাউচার ভালো করে খাইয়েন, এতদিন যা খাইছেন এখন বুইজ্যাশুইন্যা খাইয়েন। তখন মহিলা কর্মকর্তা বলেন, আপনি এসব কী বলছেন। এর উত্তরে জামায়াত কর্মী বলেন, যা বলছি ভালো করেই বলছি। ভদ্রলোকের মতো চিঠি পাঠাবেন। আপনি ইউএনওকে কমপ্লিন করেন যে- জামান ভাই ফোন দিয়ে এই কথা বলছে।
মহিলা কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে ওই জামায়াত কর্মীকে আরও বলতে শোনা যায়, আপনি সংশোধন হয়ে যান। আওয়ামী লীগের সময় অনেক খাইছেন। আপনি এখন থেকে ভালো হয়ে যান। এসময় তিনি এই মহিলা কর্মকর্তাকে সালথা ছাড়ার কথা বলেন। তিনি বলেন, সম্ভব হলে সালথা ছাড়েন। তখন ওই কর্মকর্তা বলেন- ডিপার্টমেন্টের ইচ্ছায় আমি সালথা থাকছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই জামায়াত কর্মী কালবেলাকে বলেন, আমি কোনো দলের না। আমার দোকানে উপজেলা জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারিকে চিঠি দেওয়ার জন্য এসেছিল। ওই চিঠিতে কোনো খাম ছিল না। পরে আমি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম, এটা ধমক হইলো কীভাবে। কারণ, তিনি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করেছেন। তাছাড়া এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের দোসর। আওয়ামী লীগের সময় ক্ষমতা দেখিয়েছে, প্রতিদিন দুপুর ২টার পর অফিস করত।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা শাখার আমির আবুল ফজল মুরাদ কালবেলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন। তাকে ধমকায়নি, জানতে চেয়েছিল। তারপরও বিষয়টি নিয়ে বসা হবে। তবে চিঠি দেওয়ার একটি ন্যূনতম কার্টেসি থাকা উচিৎ ছিল।’
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বালি কালবেলাকে বলেন, ‘ঘটনাটি আমাকে ওই কর্মকর্তা মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’