গাইবান্ধায় অসময়ে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তিস্তা ও ব্রাহ্মপুত্র নদের পানি কমে যাওয়ায় ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার চরবেষ্টিত এলাকায় নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়িসহ ফসলি জমি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেললেও তা দিয়ে ভাঙন রোধ সম্ভব হচ্ছে না। স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করার দাবি স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা যায়, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ও কাপাশিয়া ইউনিয়নে গত একমাসের মধ্যে তিস্তা নদীর ব্যাপক ভাঙনের মুখে পড়ে সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে পুটিমারী ও চর দরবস্তবাড়ি নামে দুইটি গ্রাম। এছাড়াও নদী তীরবর্তী ফুলমিয়ার বাজার, বাবুর বাজারসহ ৫টি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন অব্যাহত আছে। এরইমধ্যে এসব এলাকার শত শত আবাদি জমিসহ বিলীন হয়েছে হাজারো বসতভিটা।
অন্যদিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লাচর ইউনিয়নে প্রতিবছর নদীভাঙনে মানচিত্র থেকে বিলীনের পথে ইউনিয়নটি। সব হারিয়ে ভাঙন এলাকার মানুষ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। ফসলি জমি, বসতভিটা হারিয়ে পথে বসেছে অনেক পরিবার।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গার চর গ্রামের মো. জরিফ মিয়া বলেন, চরের প্রতিটি মানুষের বসতভিটা কমপক্ষে ৫ থেকে ৮ বার ভাঙনের শিকার হয়েছে। গত ১০ বছর ধরে সারা বছর নদীভাঙন চলমান রয়েছে। বর্তমানে উপজেলার হরিপুর, শ্রীপুর ও কাপাদসিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে ভাঙন রোধে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা দিয়ে ভাঙন রক্ষা করা সম্ভাব হচ্ছে না।
হরিপুরের কাশিম বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ.ব.ম. আব্দুল ওয়াহেদ সরকার বলেন, উজানের পলি জমে নদী ভরে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। সেই কারণে তিস্তা অসংখ্য শাখা নদীতে রূপ নিয়েছে। যার জন্য সময়ে অসময়ে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধ করতে না পারলে চরের মানুষের কষ্ট কোনোদিন দূর হবে না।
কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া বলেন, পানি কমলে উজানে আর পানি বাড়লে ভাটিতে ভাঙন দেখা দেয়। বর্তমানে উজানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। স্থায়ীভাবে নদীভাঙন রোধে দীর্ঘদিন থেকে বিভিন্ন সংগ্রাম পরিষদ, এনজিও সংস্থা, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, জনপ্রতিনিধি কাজ করলেও আজ পর্যন্ত কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সরকার। নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর কষ্টের সীমা নেই। তার ইউনিয়নের সবগুলো ওয়ার্ড নদীর চরে। চরের একটি পরিবার বছরে ৪ থেকে ৫ বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে থাকে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাহায্য সহযোগিতা করা হয় না। ভাঙনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়েছে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের সমাজসেবক শাহদাত হোসেন বলেন, নদী খনন, ড্রেজিং, সংরক্ষণ, মেরামত এবং শাসন ছাড়া তিস্তার ভাঙন রোধ করা সম্ভাব নয়। নদী খনন ও ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ একমুখী করলে নদীভাঙন কমে যাবে। ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জিও টিউব ও জিও ব্যাগ এখন কোনো কাজে আসছে না। চরের মানুষের হাহাকার দূর করতে হলে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করতে হবে। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের ওপর মহলের নিকট জোর দাবি জানান। তা না হলে এই উপজেলার মানচিত্র পরিবর্তন হয়ে যাবে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধ সরকারের ওপর মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। নদীভাঙন দেখা দিলে জিও টিউব, জিও ব্যাগ ফেলা এবং সরকারের ওপর মহলে তথ্য প্রদান ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। নদী খনন, ড্রেজিং , শাসন এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা ছাড়া তিস্তার ভাঙন রোধ সম্ভাব নয়।
এ এইচ শামীম/এফএ/জেআইএম