চট্টগ্রাম বন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতি

2 hours ago 3
দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে সেবার মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতি পালন করেছে। এতে বন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।  অন্যদিকে, পরিবহন ফি ৫৭ থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করায় বিষয়টি নিয়ে দুপুরে জরুরি সভা আহ্বান করে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সেখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত বর্ধিত পরিবহন ফি স্থগিত করা হয়। কর্মবিরতির কারণে প্রায় ১ হাজার ৬৫টি কনটেইনার না নিয়েই ছয়টি জাহাজ বন্দর ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন শিপিং ব্যবসায়ীরা। এতে আন্তর্জাতিক ট্রান্সশিপমেন্ট শিডিউল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানান তারা। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, বন্দরে যেসব কনটেইনার রাখার সক্ষমতা রয়েছে, তার তুলনায় এসব কর্মসূচির কোনো প্রভাব পড়েনি। এখনো বন্দরের সক্ষমতার তুলনায় দেড় হাজারের বেশি কনটেইনার কম রয়েছে। রোববার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সেবার মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদে কর্মবিরতি পালন করেছে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন। কর্মসূচি অনুযায়ী, এ সময়ে বন্দরসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম থেকে বিরত ছিল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা। এর আগে গতকাল শনিবার এক প্রতিবাদ সভা থেকে সপ্তাহব্যাপী প্রতীকী কর্মসূচির ঘোষণা দেন পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক আমীর হুমায়ূন মাহমুদ চৌধুরী। নগরের নেভি কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশে জানানো হয়, এক সপ্তাহের মধ্যে মাশুল স্থগিত না হলে বড় আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এসএম সাইফুল আলম কালবেলাকে বলেন, মাশুল বাড়ানোর প্রতিবাদেই এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের আপত্তি উপেক্ষা করে গত ১৪ সেপ্টেম্বর নতুন মাশুলের গেজেট প্রকাশ করা হয়, যা কার্যকর হয় ১৫ অক্টোবর থেকে। আগের তুলনায় গড়ে প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে এ মাশুল কার্যকর করা হচ্ছে বলে সমালোচনা রয়েছে। বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ কালবেলাকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও পরিবহন মালিকদের কর্মবিরতির কারণে প্রায় ১ হাজার ৬৫ কনটেইনার পণ্যবোঝাই না করেই ছয়টি জাহাজ বন্দর ছেড়ে গেছে। যেহেতু মাদার কানেকশন, কমিটমেন্ট ও জাহাজের শিডিউল ব্যবস্থাপনাসহ নানা কারণে তারা বাধ্য হয়েই চলে গেছে। মূল বিষয় হলো, আলোচনাবিহীনভাবে পরিবহন ফি বাড়ানোয় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে, যেহেতু ব্যবসায়ী ফোরামগুলো ট্যারিফ বৃদ্ধির বিষয়ে সজাগ; তাই যৌক্তিকভাবে সমন্বয় না হলে সামনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, বন্দরের জিসিবি, সিসিটি-১ ও ৩ এবং এনসিটি-২, ৩, ৫ নম্বর জেটি থেকে এসব জাহাজ ছেড়ে গেছে। জাহাজগুলো হলো এক্সপ্রেস লোতসে, এমএসসি কাভায়া-২, সোল রেসিলিয়েন্স, ইন্টারেশিয়া ফরোয়ার্ড, আমালফাই বে এবং এমএসসি সাইজিং। এসব জাহাজে এক হাজার ৬৫ একক কনটেইনার পণ্যবোঝাই হতে পারেনি, যেগুলো সিঙ্গাপুর, চীন, শ্রীলঙ্কা ও স্কটল্যান্ডের বন্দরে যাওয়ার কথা ছিল। কনটেইনারগুলো সময়মতো বন্দরে না পৌঁছানোয় এ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরে মাদার ভ্যাসেলের শিডিউল বিপর্যয়ের আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) সহসভাপতি খাইরুল আলম সুজন কালবেলাকে বলেন, আমি যতটুকু শুনেছি, যেসব জাহাজ ছেড়ে গেছে, সেখানে অনেকেই রপ্তানির নির্ধারিত লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। তবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক কালবেলাকে বলেন, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছে। কর্মবিরতির কারণে বন্দর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে বা একেবারে শাটডাউন হয়ে গেছে— এমন নয়। সেভাবে ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি। তিনি আরও বলেন, শনিবার পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতি থাকলেও, বন্দরের ভেতরে জাহাজ চলাচলসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালু ছিল। যেখানে ১ হাজার কনটেইনার ডেলিভারি যাওয়ার কথা, সেখানে হয়তো ৩০০ কনটেইনার গেছে। তবে আজ কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলে তা পূরণ হয়ে যাবে। এতে পণ্য বা কনটেইনার জটের কোনো আশঙ্কা নেই। কারণ, আমাদের সক্ষমতা রয়েছে ৬০ হাজারের বেশি। বর্তমানে বন্দরে রয়েছে ৪৪ হাজার ৫০০ কনটেইনার। অন্যদিকে, বন্দরে প্রবেশের যানবাহনের বর্ধিত গেট পাস ফি (বাড়তি মাশুল) স্থগিত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে বিকেল ৪টার পর থেকেই বন্দরে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান প্রবেশ শুরু করেছে।
Read Entire Article