চুরির অভিযোগে যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতন

5 hours ago 5
হবিগঞ্জের বাহুবলে মোবাইল ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে এক যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের পরে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) এ ঘটনায় জাহেদ মিয়া বাদী হয়ে হবিগঞ্জ বিচারিক হাকিম আদালতে ১৩ জনকে আসামি করে মামলা করেছেন। বাহুবল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মামলার বিষয়টি কালবেলাকে নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত রোববার (৯ মার্চ) বাহুবলের রামাকাশি ইউনিয়নের যমুনাবাদ গ্রামে তাকে নির্যাতন করার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়া (২৮) হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বনদক্ষিণ গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় দর্জি। আসামিররা হলেন- বনদক্ষিণ গ্রামের আব্দুল ওয়াদুদ, আবদুল মালিক, ছালিক মিয়া, মোজাহিদ মিয়া, আমীর আলী, আলমগীর, যমুনাবাগ গ্রামের রুয়েল মিয়া, সোহেল মিয়া, কবির মিয়া, কাজল মিয়া, তাজল মিয়া, সুমন মিয়া ও জামাল মিয়া। পরে মামলা হলে আমীর আলী একজন গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। স্থানীয়রা জানান, গত শনিবার (৮ মার্চ) রাতে যমুনাবাদ গ্রামের আবদুল কাইয়ুমের বাড়ি থেকে দুটি মোবাইল চুরি হয়। পরে সন্দেহভাজন হিসেবে একই উপজেলার তারাপাশা গ্রামের কিম্মত আলীর ছেলে শহীদুল মিয়াকে (৩০) আটক করে বেধড়ক পেটানো হয়। তাকে চাপ প্রয়োগ করলে তিনি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বনদক্ষিণ গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে জাহেদ মিয়ার নাম বলেন। উত্তেজিত লোকজন কটিয়াদি বাজার থেকে জাহেদকে ধরে নিয়ে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজন মোবাইল ফোনের টাকা দেওয়ার শর্তে তাকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। বুধবার (১২ মার্চ) সকালে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি অবস্থায় নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়া বলেন, আমি কটিয়াদি বাজারে একটি দর্জির দোকানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছি। ঘটনার দিন রাতে আমাকে ফোন করে নিয়ে যায় কয়েকজন। পরে তারা আমাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। আমি বারবার প্রাণভিক্ষা চাইলেও তারা আমাকে ছাড়েনি। আমি কখনো চুরির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। মূলত পূর্ব শত্রুতার জেরেই আমার ওপর এমন নির্যাতন চালানো হয়েছে। জাহেদের ছোট বোন পিংকি আক্তার বলেন, আমার ভাই কোনো অন্যায় করেননি। মানুষকে দুই-একটি ঘুসি বা গালি দিলে সহজেই স্বীকার করে নেয়। অথচ তাকে মেরে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পরও চুরির কথা স্বীকার করেননি। যদি তিনি চুরি করতেন, তাহলে অবশ্যই স্বীকার করতেন। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের ডা. অনুজ কান্তি দাশ বলেন, নির্যাতনের শিকার জাহেদ মিয়াকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার শরীরের ১৫ শতাংশের বেশি পুড়ে গেছে। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে অস্ত্রোপচার করা লাগতে পারে। যমুনাবাদ গ্রামে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুমের বাড়ির নারীরা জানান, শহিদুলের কথাতেই স্থানীয়রা জাহেদকে ধরে এনেছিল। উপস্থিত লোকজন তাকে মারধর করে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা এতে জড়িত না। জায়েদ মিয়া স্থানীয় কটিয়াদি বাজারের এম মাস্টার্স টেইলার্স ও মোছাব্বির ক্লথ স্টোরে দর্জির কাজ করেন। প্রতিষ্ঠানের মালিক মোছাব্বির হোসেন বলেন, জাহেদ শান্ত স্বভাবের ছেলে। তিনি আমার দোকানে দর্জির কাজ করেন। তার ওপর এমন অমানুষিক নির্যাতন মেনে নেওয়া যায় না। বাহুবল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের করার পরে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, জাহেদ ও শহিদুলের বিরুদ্ধে আগের চুরির মামলা রয়েছে।
Read Entire Article