জিআই স্বীকৃতি পেল ফুলবাড়ীয়ার হাতে তৈরি ‘লাল চিনি’

2 hours ago 1

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার ঐতিহ্যবাহী হাতে তৈরি লাল চিনি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, ‌‘গত বছরের ১১ জুলাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে লাল চিনির জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। অন্য কোনো পক্ষের দাবি না থাকায় সব প্রক্রিয়া শেষে স্বীকৃতি পেয়েছি। সনদের জন্য আজ মঙ্গলবার সরকার নির্ধারিত ফি জমা দেওয়া হয়েছে।’

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কৃষকরা আখ উৎপাদন ও লাল চিনি তৈরির কাজ করেন। উপজেলায় প্রতিবছর শতকোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি হয়। এ বছর উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। এক হেক্টর জমিতে উৎপাদিত আখ থেকে প্রায় আট মেট্রিক টন লাল চিনি উৎপাদন হয়। এ বছর প্রায় ১০৮ কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি করেছেন কৃষকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জিআই স্বীকৃতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে। কৃষকরা উৎপাদন বাড়াবেন। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতাও বাড়বে। অর্গানিক পণ্য হিসেবে দেশের বাইরে রপ্তানি করা গেলে চাষিদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হবে।

স্থানীয় লোকজন ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোনো ধরনের রাসায়নিক ছাড়াই হাতে তৈরি হয় লাল চিনি। চিনি উৎপাদনের প্রথম ধাপে আখ কেটে ইঞ্জিনচালিত মেশিনে মাড়াইয়ের মাধ্যমে রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর চলে অন্যান্য কাজ। ড্রামে করে রস নিয়ে জ্বালঘরের ভেতরে ৮-১০টি চুল্লিতে বড় লোহার কড়াইয়ে জ্বাল দিতে হয়।

আরও পড়ুন:

কাঁচা রস ঘণ্টাখানেক জ্বাল দেওয়ার পর তা ঘন হয়ে এলে কড়াই নামিয়ে কাঠের তৈরি ডাং (হাতল) দিয়ে গরম রসে দ্রুত ঘর্ষণ চালাতে হয়। ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে জমতে থাকে সেই রস। দ্রুত ঘর্ষণের ফলে একপর্যায়ে বালুকণার মতো হয়ে সেই রস লাল চিনিতে রূপ নেয়। প্রতি মণ গড়ে আট হাজার টাকায় বিক্রি হয় লাল চিনি।

উপজেলার বাকতা ইউনিয়নের বাকতা গ্রামের কৃষক জয়নাল মিয়া বলেন, ‘হুনছি আমগর (আমাদের) তৈরি লাল চিনির নাম একটা তালিকায় উঠছে। বেশিরভাগ কৃষক দেশি জাতের আখ চাষ করে। ভালা জাতের আখ সবাই চাষ করলে ফলন আরও বাড়ত। আমরা যদি লাভবান হই, তাহলে আমরা আরও বেশি চাষাবাদ করতে উৎসাহ পায়াম (পাব)।’

জিআই স্বীকৃতি পেল ফুলবাড়ীয়ার হাতে তৈরি ‘লাল চিনি’

কালাদহ গ্রামের কৃষক সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘২০০ বছরের বেশি সময় ধরে আখের রস থেকে সনাতন পদ্ধতিতে বংশানুক্রমিকভাবে হাতে লাল চিনি তৈরি করছেন এই উপজেলার কৃষকরা। আমার বাপ-দাদারা আখ চাষ করে লাল চিনি উৎপাদন করতেন। এখন আমিও আখ থেকে চিনি উৎপাদন করি। এই চিনিতে কোনো ভেজাল নেই।’

এ বিষয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর ইসলাম বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পাওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ উচ্ছ্বসিত। এ স্বীকৃতি এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করছি।’

কোনো একটা দেশের মাটি, পানি, আবহাওয়া ও মানুষের সৃজনশীলতা মিলে কোনো পণ্য তৈরি হলে তাকে বলা হয় সেই দেশের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য। আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ববিষয়ক সংস্থা ওয়ার্ল্ড প্রপার্টি রাইটস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউআইপিও) নিয়ম মেনে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডওিপি) এই স্বীকৃতি ও সনদ দিয়ে থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশের স্বীকৃত জিআই পণ্য ৫৫টি। তবে, মোট নিবন্ধিত (সনদপ্রাপ্ত) জিআই পণ্য ৬০টি।

২০১৬ সালের ১৭ নভেম্বর দেশের প্রথম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি।

কামরুজ্জামান মিন্টু/এসআর/এমএস

Read Entire Article