কক্সবাজারের টেকনাফের পাহাড়ে জড়ো করা ৮৪ জন মালয়েশিয়াগামী ভুক্তভোগীকে মানবপাচারকারীদের কবল থেকে উদ্ধার করেছে বিজিবি ও র্যাব।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় পাচার চক্রের মূল আস্তানায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করে বিজিবির টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) ও র্যাব-১৫ এর যৌথ দল। এসময় পাচার চক্রের তিন সদস্যকেও আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- টেকনাফের বাহারছড়ার উত্তর কচ্ছপিয়ার সালামত উল্লাহর ছেলে আব্দুল্লাহ (২১), আবুল হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম(২০) ও মো. ফিরোজের ছেলে মো. ইব্রাহিম (২০)।
এসময় পাচার চক্রের সদস্য বাহারছড়া ইউনিয়নের মৃত মীর কাসেমের ছেলে রেজাউল করিম (৩৭) ও মমতাজ সওদাগরের ছেলে আয়াতুল তনজিদ (৩০) পালিয়ে যান।
বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম জানান, মানবপাচার রোধে অপরাধী চক্রগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। অভিযানে উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগী ও আটকদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তের মাধ্যমে মানবপাচার চক্রগুলোর গোপন আস্তানা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় অভিযানকারীরা।
তিনি জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর পাওয়া গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকার গহিন পাহাড়ে পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়া কিংবা থাইল্যান্ডে নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগীকে আটকে রেখেছে। খবর পাওয়া মাত্রই অধিনায়ক, ২ বিজিবির নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। অভিযানের শুরুতে বাহারছড়া পাহাড়ি এলাকা থেকে এক পাচারকারীকে আটক ও ৪ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারদের কাছ থেকে লোমহর্ষক অভিজ্ঞতার বর্ণনা ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক সাফল্যের পরে সংঘবদ্ধ চক্রকে চরম আঘাত করতে টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, লে. কর্নেল আশিকুর রহমান ও র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান সমন্বিত এবং বৃহৎ যৌথ অভিযান চালানোর পরিকল্পনা নেন। সেই সিদ্ধান্তে বিজিবি ও র্যাব কয়েকটি চৌকস আভিযানিক দল বাহারছড়া কচ্ছপিয়া এলাকা থেকে রাজাছড়া পাহাড়ের ওপর রুদ্ধশ্বাস চিরুনি অভিযান শুরু করে। অভিযানের প্রথম ধাপে ১৪ জন ও পার্শ্ববর্তী আরেকটি পাহাড় থেকে ১৩ জন ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করা হয়। এরপরই রাজাছড়া এলাকার অন্য একটি পাহাড়ে অভিযান চালানোর সময় পলায়নরত পাচারকারীরা মরিয়া হয়ে পাহাড়ের ওপর থেকে যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে প্রথমে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে ও এসময় বেশ কিছু জিম্মিকে পাহাড়ের নিচে ঠেলে দেয়।
নিরপরাধ ভুক্তভোগীদের জীবন রক্ষার্থে পাল্টা গুলি না ছোঁড়ে যৌথবাহিনী। তারা তাৎক্ষণিক পাহাড়টি ঘিরে রেখে খাড়া ঢাল বেয়ে সশস্ত্র পাচারকারীদের ধরতে পাহাড়ের চূড়ায় কৌশলী অভিযান চালায়। বিজিবি ও র্যাবের প্রচেষ্টায় প্রায় ১২ঘণ্টার অভিযানে পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে আটক করা হয়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে একটি ওয়ান শুটার গান ও একটি একনলা বন্দুক উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের আস্তানা তল্লাশি করে উদ্ধার হয় একটি বিদেশি পিস্তল, দুইটি দেশীয় রামদা ও একটি চাকু। এসময় ৩টি অস্ত্রের চেম্বার থেকে ৩ রাউন্ড তাজা গুলি জব্দ করা হয়।
মো. শরিফুল ইসলাম আরও জানান, ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে বিভিন্ন পাহাড় ও পাদদেশ থেকে ৫১ জন, পাহাড়ের চূড়া থেকে ৬ জন, দমদমিয়া বিওপির বড়ইতলি থেকে ৪ জনসহ সামগ্রিকভাবে ৮৪ জন ভুক্তভোগীকে পাচারচক্রের কবল থেকে মুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। অভিযানে আটক ৩ জনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে স্থানীয় থানায় মামলা করা হয়েছে।
সীমান্তে মানবপাচার ও অপরাধ কাণ্ড বন্ধে বিজিবি ও র্যাব জিরো টলারেন্স নীতিতে অবস্থান করছে। সমন্বিত এ প্রচেষ্টা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সায়ীদ আলমগীর/জাহাঙ্গীর আলম/এমএন/জেআইএম