ডিবির অভিযানের সময় একজনের মৃত্যু, পরিবারের অভিযোগ হত্যা
শরীয়তপুরের জাজিরায় গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযান চলাকালে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু পরিবারের দাবি, অভিযানকালে মারধরের শিকার হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। আর ডিবি বলছে, আতঙ্কিত হয়ে মাটিতে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) রাত পৌনে ১০টার দিকে উপজেলার নাওডোবা ইউনিয়নের কালু বেপারীকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মৃত মিলন বেপারি একই এলাকার মৃত আমজাদ বেপারীর ছেলে।
জেলা ডিবি পুলিশ ও পরিবার সূত্র জানায়, শনিবার রাতে জাজিরার নাওডোবা পদ্মা সেতু এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালায় জেলার গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক নওশের আলীসহ ৮ সদস্য। অভিযান চলাকালে মোজাম্মেল নামের এক ব্যক্তিকে গাঁজাসহ আটক করেন তারা। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নাওডোবা এলাকার কালু বেপারীকান্দি এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী জামাল বেপারির বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এ সময় জামাল বেপারির প্রতিবেশী ও মামা মিলন বেপারি আতঙ্কিত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তার মৃত্যু হয়।
কিন্তু পরিবারের অভিযোগ, ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাকে ঘর থেকে বের করে মারধর করা হলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
মিলন বেপারির ছেলে আল-আমিন বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে ৮/১০ জন লোক ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাকে ঘর থেকে বের করে বাবাকে চেক করে। পরে দেখি তারা বাবাকে মারধর করছে। মাথায়, বুকে ও পিঠে ঘুষি দিচ্ছে। বাবা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মুখ দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে। দৌড়ে গিয়ে দেখি বাবা কোনো নিঃশ্বাস নিচ্ছে না। এ সময় আমার মা কান্নাকাটি শুরু করলে ডিবি পুলিশের সদস্যরা মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়।
মিলন বেপারির স্ত্রী রেনু বেগম অভিযোগ করেন, ডিবি পরিচয় দিয়ে আমার স্বামীকে ঘর থেকে ডেকে বাইরে নিয়ে আসে। আর দুজন ঘরে ঢুকে আমাদের বের হতে না করেন। আমি দরজা দিয়ে উঁকি দিলে তারা আমাকে বলে, একজন লোক অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে, তাড়াতাড়ি এসে দেখেন। পরে দৌড়ে গিয়ে দেখি আমার স্বামী মুখে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে ছয়জন লোক দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের বলি, স্যার আমার স্বামীকে হাসপাতালে নিতে হবে, তিনি নিঃশ্বাস নিচ্ছেন না। বলার পর তারা তিনটি মোটরসাইকেল চালিয়ে চলে যায়। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার চাই।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আকরাম এলাহী বলেন, মরদেহটির ময়নাতদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক আবু বকর মাতুব্বর বলেন, হাসপাতালে যিনি মারা গেছেন তার পরিবার হত্যার অভিযোগ করেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে দেখবে। আর আমাদের ফোর্সের কোনো অপরাধ থাকলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাদের ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আদিবুল ইসলাম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। যদি কোনো অফিসারের অসদাচরণ থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।