ঢাকায় ঘরের বাতাসে মৃত্যু ঝুঁকি : গবেষণা

3 weeks ago 10
রাজধানী ঢাকায় বাহিরের বায়ুদূষণের পাশাপাশি ঘরের ভেতরেও বায়ুদূষণ হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি। ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, কম ওজনের শিশু জন্মদান, মস্তিষ্ক বিকাশজনিত সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য অবনতি এবং অপমৃত্যুর মতো গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছে। সোমবার (০২ ডিসেম্বর) বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এয়ার কোয়ালিটি, ক্লাইমেট চেইঞ্জ এন্ড হেলথ (এসিএইচ) ল্যাবের প্রধান ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন এসব তথ্য জানান। এর আগে, গত ১১ অক্টোবর ‘ইনডোর এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে ঢাকায় ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ সম্পর্কে ‘ক্যারেক্টারাইজিং ইনডোর এয়ার কোয়ালিটি অ্যাট হোম মাইক্রো এনভায়রনমেন্ট ইন ঢাকা সিটি’ শীর্ষক একটি গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। গবেষণায় ঢাকার ৪৩টি ঘরের ভেতরের পিএম-২.৫ দূষণের মাত্রা নির্ণয় করা হয়েছে এবং বায়ুমান উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবকগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। গবেষক দলের সদস্যরা হলেন- এসিএইচ ল্যাবের প্রধান ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাখাওয়াত হোসেন, এসিএইচ ল্যাবের রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট (আরএ) আফসানা ইয়াসমিন, ইমরান আহমেদ, মারিয়া হায়দার ও মো. কামাল হোসেন এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ আব্দুল মোতালিব।  গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, ঘরের ভেতরে গড় দূষণ মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ৭৫ দশমিক ৬৯ মাইক্রোগ্রাম, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি। এছাড়া কয়েকটি ঘরে দূষণ মাত্রা ছিল প্রতি ঘনমিটারে ২০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি, যা বাসিন্দাদের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। বিশ্বের অনেক শহরের তুলনায় ঢাকায় ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের মাত্রা অনেক বেশি উদ্বেগজনক। ঘরের জানালা বা অন্য ছিদ্র দিয়ে বাইরের দূষিত বায়ুর প্রবেশ ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম। গবেষণায় উল্লেখ করা হয়, প্রথমত বাইরের বায়ুর অনুপ্রবেশের কারণে প্রায় ৪০ শতাংশ ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ হচ্ছে। দ্বিতীয়ত দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করার কারণে ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ হচ্ছে। কেননা রান্নার সময় ঘরের ভেতরের বাতাসে পিএম-২.৫-এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে যখন প্রতিবার রান্নার সময়কাল দেড় ঘণ্টার বেশি হয়। তবে যারা নিয়মিত ঘর পরিষ্কার করেন, তাদের ঘরের দূষণ তুলনামূলক কম। এছাড়া ১২০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের বাড়িতে দূষণের মাত্রা বেশি। সংবাদ সম্মেলনে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘২০১৯ সালের স্টেট অব গ্লোবাল এয়ারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ বাংলাদেশের চতুর্থ প্রধান মৃত্যুঝুঁকির কারণ। এর ফলে প্রতি বছর ৭০ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটছে। ঘরের ভেতরের বায়ুতে ক্ষতিকর পদার্থ জমা হওয়ায় নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, কারণ তারা বেশিরভাগ সময় ঘরের ভেতরে কাটায়।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ দিনের প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ সময় ঘরের ভেতরে কাটায়। মানুষের দৈনন্দিন বায়ুদূষণের একটি বড় অংশ ঘরের ভেতরে শ্বাস নেওয়ার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। আমরা সাধারণত বাহিরের দূষণ সম্পর্কে সচেতন থাকি, কিন্তু ঘরের ভেতরের দূষণ সম্পর্কে অনেকে জানি না। যেহেতু ঘরের ভেতরের দূষণকে এড়িয়ে চলা সম্ভব নয়, তাই দূষণ কমাতে উৎসগুলো চিহ্নিত করে তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাইরের দূষিত বায়ুর প্রবেশ রোধে ঘরের জানালা ও বায়ুচলাচল ব্যবস্থার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি, যা ঘরের ভেতরের বায়ুর মাত্রা উন্নত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। রান্নার সময় দূষণ কমাতে পরিবেশবান্ধব এবং উন্নতমানের চুলার ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত, যা বিশেষত নারীদের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে জনগণকে গৃহস্থালি বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করতে ব্যাপক প্রচার কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন।’ গবেষক দলের আরেক সদস্য আফসানা ইয়াসমিন বলেন, ‘উৎসগুলো আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাই যখন বাইরে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে, তখন ঘরের জানালা বন্ধ রাখার মাধ্যমে বা এসি ব্যবহার করে বাইরের বায়ুর অনুপ্রবেশ রোধ করা যেতে পারে। এছাড়া রান্নার সময় রান্নাঘরের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং ঘর নিয়মিত পরিষ্কার রাখা ঘরের ভেতরের দূষণ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
Read Entire Article