তিস্তার পানি বৃদ্ধি, ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

3 months ago 6

উজানের ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে গত দুদিনে তিস্তা নদীর পানি বিপজ্জনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে লালমনিরহাট জেলার তিস্তা তীরবর্তী বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের শত শত একর ফসলি জমি এবং রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে।

সোমবার (০২ জুন) সন্ধ্যা ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে দেখা গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, রোববার (০১ জুন) সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার মাত্র ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি প্রবাহ কমতে থাকে। একই পয়েন্টে বিকাল ৩টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। 

সোমবার সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর সকাল ৯টায় ৬৫ সেন্টিমিটার, দুপুর ১২টায় ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু ৩ ঘণ্টার ব্যবধানে তিস্তার পানি ফের বেড়ে বিকাল ৩টায় ৫৫ সেন্টিমিটার এবং সন্ধ্যা ৬টায় পানি আরও বেড়ে ৪৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা আতঙ্কে রয়েছেন দুই পাড়ের মানুষ।

জানা গেছে, পানি বেড়ে যাওয়ায় অনেক জমির ফসল কাটার উপযুক্ত সময় হলেও তা ঘরে তোলার আগেই প্লাবিত হয়ে যায়। এতে সবজি ও অন্যান্য ফসল ঘরে তোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন কৃষক। তারা এখন নৌকা ও অন্যান্য উপায়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমি থেকে ফসল উদ্ধারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় একই অবস্থা দেখা গেছে। নদী তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। কোথাও কোথাও পাট, ভুট্টা ও বাদাম পানিতে তলিয়ে গিয়ে গাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষক পরিবারগুলো।

মহিষখোচার গোবর্ধন এলাকার কৃষক আবুল হোসেন জানান, আমার দুই একর জমিতে ভুট্টা ছিল। কাটার সময় হয়েছিল, কিন্তু হঠাৎ পানি এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। এখন আর কিছুই করার নেই। নৌকা দিয়ে যা পারি তুলে নিচ্ছি।

আরেক কৃষক হাসান আলী বলেন, আর ১৫/২০ দিন সময় পেলেই বেশিরভাগ ফসল ঘরে তুলতে পারতাম। হঠাৎ করে বন্যায় ক্ষতির আশঙ্কা করছি। শেষ সময়ে এসে পানি পেলে ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। এ বছর বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় এ বন্যা দেখা দিয়েছে। আমরা পরবর্তীতে ক্ষতি নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পানি বোর্ড লালমনিরহাট কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, শুষ্ক মৌসুমে যেসব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছিল, সেখানে প্রতিরক্ষা কাজ আগেই সম্পন্ন করা হয়েছে। জরুরি দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী তিন দিন তিস্তায় পানি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে তিস্তা পানি উন্নয়ন বোর্ডও রয়েছে সতর্ক অবস্থানে।

Read Entire Article