সংস্কৃতি বিকাশে নতুন প্রকল্পের আশ্বাস দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আমাদের একটা প্রজেক্ট আছে, তার নাম হবে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি। এটার মধ্যে বাংলাদেশের যত সংস্কৃতি, বাংলাদেশের যত গান আছে; পল্লী গান, বাউল গান- আমরা এগুলোকে মেইনস্ট্রিমে (মূলধারা) নিয়ে আসবো।
সোমবার (২৬ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দল এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
খসরু বলেন, বাঙালি মুসলমানদের জীবনে, বাঙালির জীবনে কাজী নজরুল ইসলামের লেখার যে প্রভাব এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে যখন অনেক বড় বড় কবিও তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেননি, তখন উনি ওনার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। জেল খেটেছেন...‘কারার ঐ লৌহ কপাট’- এটা তো ভোলার কিছু নয়। এটা আজীবনের একটা কবিতা-গান, আমাদের মনে গেঁথে আছে। শেখ হাসিনার আন্দোলনের বিভিন্ন সময় আমরা এই গান কতবার গেয়েছি।
তিনি বলেন, আমি অনেক বেশি আনন্দিত তাকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসেবে সম্মান দেওয়া হয়েছে। উনি খুব ভালো একটা জায়গায় কবরস্থ হয়েছেন। তবে ওনার সাহিত্যচর্চা আমরা মনে হয় সেভাবে আনতে পারিনি। এটা মনে হয় আমাদের ব্যর্থতা। আমরা পড়াই না, পড়তে চাই না, পরিবারও পড়তে চায় না। স্কুলেও পড়ে না, সামাজিকভাবেও আলোচিত হয় না, সংস্কৃতিতেও কোনো প্রভাব নেই। এটা সত্যি কথা, আমরা এটা পারিনি। আমি একটা কথাই বলবো এই বিষয়গুলোতে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশ একটা বড় পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। স্বৈরাচার পালিয়ে যাওয়ার পরে দেশ একটা নতুন পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের মধ্যেও কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি কীভাবে আগাবে আগামী দিনে এটা আমাদের নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি আমাদের নির্ধারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন
- কবি নজরুলের রচিত গ্রন্থগুলো অনুবাদের উদ্যোগ নেওয়া হবে: ফারুকী
- ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে কারও একার কৃতিত্ব নেই: খসরু
তিনি বলেন, আমি আপনাদের আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমাদের একটা প্রজেক্ট আছে, এর নাম হবে ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রি। এই ক্রিয়েটিভ ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে বাংলাদেশের যত সংস্কৃতি, বাংলাদেশের যত গান আছে; পল্লী গান, বাউল গান- আমরা এগুলোকে মেইন স্ট্রিমে নিয়ে আসবো। আমাদের জীবনে এগুলো একসময় যে প্রভাব রাখতো এখন রাখে না। কারণ আমরা এগুলোকে মেইনস্ট্রিমে রাখতে পারিনি। এই গানগুলোকে আমাদের মেইনস্ট্রিমে আনতে হবে।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এখানে যারা এই গানগুলোর চর্চা করেন, এই গানগুলোর সঙ্গে কাজ করেন, আমরা সবাইকে নিয়ে বসবো। আন্তর্জাতিকভাবে মিউজিকের কিন্তু কোনো ভাষা নেই। কিন্তু মিউজিক অনেক কিছু কমিউনিকেট করে; জনগণের কাছে মানুষের কাছে, মানুষের মনে। আমাদের যে গানগুলো আমরা সেগুলোকে মেইনস্ট্রিম করতে পারিনি। আমাদের যে নিজস্ব নাটক, আমরা কিন্তু সেগুলোকে সাপোর্ট দিতে পারিনি।
‘আমাদের গ্রামের তাঁতি, কামার, কুমার- এটা কিন্তু আমাদের কালচারের একটা অংশ। কিন্তু আমরা এগুলোকে মূল্যায়ন করতে পারিনি। আন্তর্জাতিকভাবে এগুলোর মূল্য আছে, কিন্তু আমরা দিতে পারিনি। এগুলোর প্রভাব আমাদের সংস্কৃতিতে এবং আমাদের অর্থনীতিতে রয়েছে। নাটক, সিনেমায় কামার-কুমারদের ডিজাইন কিন্তু বড় একটা অর্থনীতির অংশ। কিন্তু আমরা এগুলোকে মূল্যায়ন করতে পারিনি। এই প্রজেক্টটা আমরা নিতে চাচ্ছি, আমরা সবার সঙ্গে কথা বলবো। সবার সঙ্গে কথা বলে আমরা একটা পলিসি নির্ধারণ করবো।’ যোগ করেন খসরু।
তিনি বলেন, এই পলিসির মাধ্যমে একদিকে আমাদের সংস্কৃতির রিভাইভাল (পুনরুজ্জীবন) হবে, অন্যদিকে আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। সুতরাং এটা আমাদের কর্মসূচি থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি হুমায়ূন কবির বেপারীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপি চেয়ারপারসন উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, ড. সুকমল বড়ুয়া, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, বাংলাদেশ সংবাদপত্র এডিটর অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যকার বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাবুল আহমেদ, বাংলাদেশ পেশাজীবী জোটের সমন্বয়কারী এস এম মিজানুর রহমান, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্মের সভাপতি সৈয়দ মোজাম্মেল হোসেন শাহীন, সাংবাদিক আসাদুজ্জামান বাবুল, প্রজন্ম একাডেমির সভাপতি সাংবাদিক কালাম ফয়েজী, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক মো. মজনুর রহমান।
কেএইচ/ইএ/এমএস