নরমাল ডেলিভারিতে ‘সাইড কাটা’ নাকি সিজার, কোনটি নিরাপদ

2 hours ago 2

আর এক মাস পরেই সুলতানার ডেলিভারি। গর্ভের সন্তান ও সুলতানা সুস্থ থাকায় চিকিৎসক তাকে নরমাল ডেলিভারির বিষয়ে বুঝিয়ে বলার সময় জানালেন - প্রয়োজনে সাইড কাটা লাগতে পারে। এ কথা শুনে সুলতানা এখন ভাবছেন যে, সিজার বা সি-সেকশন করাই কি বেশি ভালো হবে?

নরমাল ডেলিভারিতে ‘সাইড কাটা’ বা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এপিসিওটমি নিয়ে অনেক নারী ও পরিবারে রয়েছে নানা ভুল ধারণা ও ভয়। সুলতানার মতো অনেকেই মনে করেন, ‘সাইড কাটা’ মানেই গুরুতর অপারেশন ও বেশি কষ্ট। তাই তারা সিজারিয়ান অপারেশনকে নিরাপদ বিকল্প ভাবেন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল।

এ বিষয়ে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাবরিনা সুলতানা মিষ্টি জাগো নিউজকে বলেন, সিজারিয়ান অপারেশন হলো একটি মেজর সার্জারি, যেখানে পেটের একাধিক স্তর ও জরায়ু কেটে শিশুকে বের করা হয়। অন্যদিকে সাইড কাটা বা এপিসিওটমি কেবল যোনিপথের এক পাশ অল্প পরিমাণে কেটে প্রসব সহজ করার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এতে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।

চলুন এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক বিশেষজ্ঞের কাছে -

সাইড কাটা আসলে কী?

ডা. সাবরিনা ব্যাখ্যা করেন, প্রসবের সময় যদি দেখা যায় শিশুর মাথা বড় বা যোনিপথ তুলনামূলক ছোট, তখন যোনিপথ ছিঁড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ অবস্থায় সামান্য একটি ‘সাইড কাটা’ দিয়ে প্রসব সহজ করা হয়। সন্তান জন্মের পরপরই সেই অংশটি সুন্দরভাবে সেলাই করে দেওয়া হয়, যা ১০–১৫ দিনের মধ্যেই সেরে যায়।

আগের দিনে কেন সাইড কাটা হতো না?

আগের দিনে বাসায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষা না থাকা ধাইয়ের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করানো হতো। এ কারণে তখন সাইড কাটার প্রথা ছিল না। ফলে তখন অনেক মায়ের প্রসবের সময় মারাত্মকভাবে যোনিপথ ছিঁড়ে যেত। এতে তারা ভয়াবহ জটিলতার শিকার হতেন। বর্তমানে হাসপাতালে দক্ষ হাতে প্রসব হওয়ায় মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই ঝুঁকি অনেক কমেছে।

সাইড কাটা কখন প্রয়োজন হয়?

সন্তান জন্মের সময় বাচ্চার মাথা বড় হলে, দীর্ঘ সময় ধরে প্রসব আটকে গেলে, শিশুর অবস্থান অস্বাভাবিক হলে, কিংবা মায়ের ক্লান্তিতে প্রসব বিলম্ব হলে সাইড কাটা প্রয়োজন হতে পারে। তবে প্রতিটি নরমাল ডেলিভারিতেই এটি করা হয় না।

ভুল ধারণা ও বাস্তবতা

অনেকেই মনে করেন, সাইড কাটলে পরবর্তীতে প্রস্রাব-পায়খানায় বা দাম্পত্য জীবনে সমস্যা হয়। এ বিষয়ে ডা. মিষ্টি বলেন, ‘এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা। সঠিক যত্ন নিলে কাটা জায়গা সম্পূর্ণভাবে ভালো হয়ে যায়, কোনো প্রকার শারীরিক বা যৌন জটিলতা থাকে না।‘

সাইড কাটার পর যত্ন ও করণীয়

  • চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ ও অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ম মেনে খাওয়া
  • প্রতিদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা
  • কুসুম গরম পানিতে পভিসেপ আয়োডিন মিশিয়ে দিনে দুইবার বসে থাকা
  • প্রচুর পানি ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া

এসব অভ্যাস ক্ষত দ্রুত সারাতে সাহায্য করে।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময়

কাটা স্থানে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে, পুঁজ বা দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বের হলে, জায়গাটি ফুলে লাল হয়ে গেলে বা জ্বর এলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ।

ডা. সাবরিনা সুলতানা মিষ্টি বলেন, ‘সাইড কাটার ভয় পেয়ে সিজার করানো একেবারেই অযৌক্তিক। প্রয়োজন অনুযায়ী এপিসিওটমি করা হয় মা ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য। তাই সচেতন হোন, ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসুন, এবং সম্ভব হলে নরমাল ডেলিভারিকেই প্রাধান্য দিন।’

চিকিৎসক পরিচিতি: ডা. সাবরিনা সুলতানা মিষ্টি
প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন।
এমবিবিএস (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এমএস (গাইনি ও অবস), বাংলাদেশ মেডিকেল ইউনিভার্সিটি (সাবেক পিজি), সিসিডি (বারডেম), ডিএমইউ, টিভিএস (আলট্রাসনোগ্রাফি), এডভান্স ট্রেইনড ইন কলপোস্কোপি।

এসইউজে/এএমপি/জিকেএস

Read Entire Article