জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) ডাটা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে রাখা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড (মান) নয় বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকা সব তথ্য ভোটাধিকার বাস্তবায়নের কাজে লাগে না। তাই এনআইডি বা নাগরিকদের তথ্যশালা নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড নয়। তবে ন্যাশনাল ডাটা অথরিটি গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আপাতত যার যার কাছে যে তথ্য আছে, তা তাদের কাছেই থাকবে।
বুধবার (১২ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁও আইসিটি ভবনের সভাকক্ষে এনআইডি ওনারশিপ নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, বিশ্বের ৯৩টি দেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ডাটাবেজ ব্যবস্থাপনা করছে। জ্যামাইকা, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর মতো ক্ষুদ্র দ্বীপ ছাড়া বলতে গেলে পৃথিবীর কোনো দেশেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নাগরিক তথ্যশালা বা এনআইডি ডাটাবেজ রাখা হয় না।
তিনি বলেন, এনআইডি সেবা উন্নত করতে বহির্বিশ্বের মতো স্বতন্ত্র ডাটা অথরিটি করতে চায় সরকার। বিষয়টি সরকারের বিশেষ বিবেচনায় আছে। এখন মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে তথ্যের আন্তঃক্রিয়াশীলতা নিশ্চিত করা হবে। পরবর্তীতে ন্যাশনাল ডাটা অথরিটির অধীনে নেওয়া হবে। এতে কেউ চাকরি হারাবেন না, বরং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
ফয়েজ তৈয়্যব বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন বা পার্সোনাল ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো তা করতে পারিনি। পার্সোনাল ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের যে রেগুলেটরি অথরিটির হবে, সেটা কার অধীনে হবে, তা নিয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
ডাটা অথরিটি কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে না উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টার এ বিশেষ সহকারী বলেন, এটা জাতীয় সম্পদ হবে। ডাটা অথরিটির বিষয়টি আইসিটির মাস্টারপ্ল্যানে আমরা রেখেছি। ন্যাশনাল ডাটা অথরিটিতে যে মন্ত্রণালয়ের সেবা দেওয়ার জন্য যতটুকু ডাটা দরকার, তারা ততটুকু পাবে। কিন্তু কোনো মন্ত্রণালয় সব ডাটার মালিকানা নিতে পারবে না। সে হিসেবে ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণের জন্য যে তথ্য দরকার তার ওপর নির্বাচন কমিশনের সব নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
তিনি আরও বলেন, তথ্যের সংখ্যার চেয়ে কোয়ালিটির ওপর জোর দেওয়া দরকার। বর্তমানে নির্বাচনের কমিশনের কাছে অনেকগুলো ডাটা ফিল্ড আছে। কিন্তু তার তথ্যের মান এবং নিরাপত্তা উভয়টিই প্রশ্নযুক্ত। বিশেষভাবে ভোটাধিকার বাস্তবায়নের জন্য যে অ্যাড্রেস ভেরিফিকেশন দরকার, সেটা অনুপস্থিত।
ফয়েজ তৈয়্যব আরও বলেন, আমরা দেখেছি, পাঁচ কোটি জনগণের বহুবিধ মৌলিক তথ্য ডার্কওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক কিছু মানদণ্ড আছে। আমরা সেই পথে এগোচ্ছি। আমরা একটি ডিস্ট্রিবিউটেড সিস্টেমের কথা বলছি। যেখানে কোনো একটি মন্ত্রণালয় সব ডাটার অধিকারী হবে না। একটি মন্ত্রণালয় সব ডাটা মালিকানা পেয়ে গেলে সেখানে ভার্নারেবলিটি তৈরি হয় এবং ফ্লোতে বাধার সৃষ্টি হয়।
বিশেষ সহকারী বলেন, আমরা রূপান্তরের পথরেখা তৈরি করেছি। সেখানে বিদ্যমান সাইলোগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ তৈরি করা হবে। কারণ এর সঙ্গে বাস্তবায়ন খরচ, বিদেশি ঋণ এবং প্রযুক্তির হস্তান্তর জড়িত। যেহেতু অনেকগুলো টাকা খরচ হয়ে গেছে, তাই আমরা এ সিস্টেমগুলোকে ইন্টারকানেক্ট করবো। তারপর আমরা ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্টের জন্য বৈশ্বিক স্ট্যান্ডার্ডের ন্যাশনাল ডাটা অথরিটি তৈরি করবো। এরপর সিটিজেন ডাটা ওয়ালেটের দিকে যাবো, যেখানে ব্যক্তি তার যেটার ওপরে সব ধরনের অধিকার রাখবেন।
সংবাদ সম্মেলনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এএএইচ/এমআইএইচএস