জাতীয় নির্বাচনে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় প্রচলিত আইন, নির্বাচনী বিধি-বিধান ও পদ্ধতিগতভাবে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নির্বাচনের কয়েকদিন আগ থেকে নির্বাচনের কয়েকদিন পর পর্যন্ত প্রত্যেক কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারির মাধ্যমে এই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ লক্ষ্যে নির্ধারিত দিনের জন্য বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভোটগ্রহণের কয়েক দিন পর পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকা তথা সমগ্র দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। সোমবার (২০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ মতবিনিময় সভা শুরু হয়।
ভোট প্রস্তুতির মধ্যে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে এএমএম নাসির উদ্দিন নেতৃত্বাধীন ইসির প্রথম বৈঠক এটি। এতে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন।
সভায় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের কার্যক্রমে সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ লক্ষ্যে সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়সাধন করে একটি ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।
তাছাড়া নির্বাচনী এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন হবে। বিশেষ করে পল্লী এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে গ্রাম পুলিশ/চৌকিদার/দফাদার নিয়োগের পাশাপাশি এ ধরনের কাজে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন হবে।
তাই আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় গোয়োন্দা সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া যেতে পারে এবং স্থানীয় সরকারের আওতাধীন ইউপি সচিব/গ্রাম পুলিশদের এ কাজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
১. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করার লক্ষ্যে সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ও সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পূর্বশর্ত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আবশ্যক। কেউ যাতে অন্তর্ঘাতমূলক বা অন্য কোন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এ সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে সে দিকে সবার সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
২. অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার রোধ/নিয়ন্ত্রণ
সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনী এলাকায় অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ব্যবহারকারীদের দমন ও অনুরূপ কার্যক্রম জোরদার করার জন্য যৌথ অভিযান অথবা অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন হবে। তাছাড়া তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে পৃথক নির্দেশনা জারি করার প্রয়োজন হবে।
৩. এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধের কৌশল নির্ধারণ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বা অন্য কোনোভাবে বিভ্রান্তিকর ও মানহানিকর তথ্য প্রচার করে যাতে কারো সম্মানহানি ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গণতান্ত্রিক মত প্রকাশের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হলেও অতীতে এটি বারবার সহিংসতা উসকে দেওয়া, জনগণের আস্থা বিনষ্ট করা ও ব্যক্তির চরিত্র হননের কাজে ব্যবহৃত হয়েছে, যা বর্তমানে আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। ফলে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধের কৌশল নির্ধারণের প্রয়োজন হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সবার এ বিষয়ে কর্মকৌশল গ্রহণ করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
৪. নির্বাচনে বিদেশি সাংবাদিক ও প্রাক-পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা/সহযোগিতা দেওয়া
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশ থেকে আগত প্রাক-পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকরা যাতে নিরাপত্তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারেন তার জন্য সব প্রকার আইনানুগ সহযোগিতা দেওয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
৫. পোস্টাল ভোটিং ব্যবস্থাপনা
প্রবাসী ভোটার ও দেশে পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানে যোগ্য ভোটারের ভোটদানের জন্য পোস্টাল ব্যালট পেপার নিরাপত্তার সঙ্গে ডাকবিভাগ থেকে বিমান বন্দর হয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে প্রেরণ এবং একইভাবে উক্ত ব্যালট পেপার ফেরত আসার সময় নিরবচ্ছিন্ন নিরাপত্তার সঙ্গে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রেরণ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে পোস্টাল ব্যালট পেপার গণনার সময়ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান, সেনাবাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম, নৌ-বাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি রিয়ার এডমিরাল মীর এরশাদ আলী, বিমান বাহিনী প্রধানের প্রতিনিধি এয়ার ভাইস মার্শাল রুশাদ দিন আসাদ, পুলিশ মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম, এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরোয়ার ফরিদ, ডিজিএফআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আনসার ভিডিপি অফিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়াল এডমিরাল জিয়াউল হক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল কাইয়ুম মোল্লা, র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, এসবি অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (প্রশাসন ও অর্থ) জি এম আজিজুর রহমান, সিআইডি অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ছিবগাত উল্ল্যাহ।
এমওএস/এমআইএইচএস/জিকেএস