বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, আমরা অনেকেই যে ভয়টা পাচ্ছি যে- নির্বাচনের দিনে বিশৃঙ্খলা হবে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে। তবে বিশ্বাস করি যে, নির্বাচন উৎসবমুখর একটা কর্মকাণ্ডে পরিণত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমরা যে আশঙ্কা করছি সে আশঙ্কা থাকবে না।
ভোটের দায়িত্বে নিয়োজিত দল সম্পৃক্ত, প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকে করে এ দাবি জানান দলটির একটি প্রতিনিধি দল। ভোটের পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ইসির প্রতি আস্থা ও গণভোট প্রসঙ্গ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা করে এ প্রতিনিধি দল। এ সময় এসব কথা বলেন আবদুল মঈন খান।
নির্বাচন ভবনে দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে দলটির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় ১০ লাখ লোকবল দরকার পড়ে। বিতর্কিত যারা, প্রশ্নবিদ্ধ যারা রয়েছেন তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে- এটা ছিল আমাদের আলোচনার একটি মূল বিষয়।
বিএনপির প্রতিনিধিদলে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং ইসির সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ জকরিয়া। এ তিনজন বিএনপির নির্বাচন কমিশন বিষয়ক কমিটির সদস্য।
রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার থাকেন ভোটের দায়িত্বে, যাদের সংখ্যা প্রায় ৯-১০ লাখ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার কাজে নিয়োজিত থাকেন ৭-৮ লাখ সদস্য।
আরও পড়ুন
বিতর্কিত কর্মকর্তারা যেন নির্বাচনে না থাকেন: ইসিকে মঈন খান
বিএনপিতে সালাহউদ্দিন-নবী-নয়ন, জুলাই স্পিরিট নিয়ে মাঠে জামায়াত
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান জানান, বিগত তিনটা নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। ১৫ বছরের কর্মকর্তারা ১৫ মাসে সংশোধিত হবেন না । বাস্তবতা বিবেচনা করে এগোতে হবে।
তিনি আরও বলেন, এদেশে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয় এবং সেই গুরুদায়িত্ব আজকের নির্বাচন কমিশনের ওপরে রয়েছে বলেই আমরা এই আলোচনায় এসেছি। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হলে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, যে দায়িত্বটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। শুধু এই পাঁচজন করতে পারবেন না এবং এর জন্য বিশাল একটা ম্যানপাওয়ার লাগবে। কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের প্রয়োজন হবে নির্বাচনে।
বিগত তিনটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
তিনি যোগ করেন, তাহলে এই বিশাল একটি জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন যে হয়- তারা কারা? এই প্রশ্নটি আমাদের বিবেচনায় এসেছে এবং এটা বিবেচনায় করছি। গত ১৭ বছর দেশের প্রশাসনিক বিভাগকে রাজনৈতিকভাবে মোটিভেটেড করে গত তিনটি নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। যারা নির্বাচনের দিন সরকারি কর্মকর্তা হয়েও নির্বাচন কমিশনের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা করেছিলেন তাদের কারণে হয়েছিল এবং এই কথাটি আমরা গুরুত্ব দিয়ে বলেছি।
বিএনপির এই নেতা বলেন, গত ১৫ মাসে সবকিছু সংশোধিত হয়ে যাবে এতটা আশা করা আসলে বাস্তবতা নয়। কাজেই নির্বাচন কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে এবং এটাও বাস্তবতা। ইসি এরইমধ্যে সচেতন আছেন। তারপরও আমাদের এই কথাগুলো বলা প্রয়োজন। সেই মূল কথাটি আমরা বলেছি এবং বিশেষ করে বিতর্কিত যারা, প্রশ্নবিদ্ধ যারা রয়েছেন তারা যেন আগামী নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে অংশ নিতে না পারেন, কোনো প্রভাব ফেলতে না পারেন সে সম্বন্ধে নির্বাচন কমিশনকে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে এটা ছিল আমাদের আলোচনার একটি মূল বিষয়।
বাস্তবতা বিবেচনা করে ইসিকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুরোধ জানান এ বিএনপি নেতা।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও ইসির প্রতি আস্থা
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভোটের আগে ভালো হবে এবং ভোটের দিন উৎসবমুখ হবে বলে আশা করে বিএনপির প্রতিনিধিদল।
মঈন খান জানান, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যখন দৃশ্যমান করবে যে তারা একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে চায়, তখন ভয় কেটে যাবে এবং উৎসবমুখর নির্বাচন হবে।
এ সময় ইসির প্রতি নিজেদের আস্থার কথা তুলে ধরে বিএনপি প্রতিনিধিদল।
আবদুল মঈন খান বলেন, একটি সম্পূর্ণ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেন হয় সেই ব্যবস্থা তারা করবেন। নির্বাচন কমিশনের যে মনোভাব আমরা দেখেছি, আমরা বিশ্বাসী যে তারা একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আগামীতে করতে সক্ষম হবেন।
সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে করার বিষয়ে বিএনপির অবস্থানের কথাও জানান এ বিএনপি নেতা।
এমওএ/এএমএ/জিকেএস