আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের ‘সম্প্রীতির ঐক্য’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায় জন। তিনি ৪৭তম ব্যাচের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের স্নাতক চূড়ান্ত পর্বের শিক্ষার্থী। তিনবার স্নাতক চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা দিলেও উত্তীর্ণ হতে না পারায় অনিয়মিত শিক্ষার্থী ঘোষণা করে তার প্রার্থিতা বাতিল করেছে জাকসু নির্বাচন কমিশন।
সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কার্যালয় থেকে পাঠানো এক জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অমর্ত্য রায়ের ভিপি প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়।
এর আগে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাকসু নির্বাচন কমিশনার সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে অমর্ত্যর প্রার্থিতা বাতিলের বিষয়টি জানানো হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ও আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জনকে জাকসু গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা অনুযায়ী ভোটার ও প্রার্থী হওয়ার জন্য অযোগ্য বিবেচিত হওয়ায় তার নাম ভোটার ও প্রার্থী তালিকা থেকে প্রত্যাহার করা হলো।
জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ ধারায় বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নিয়মিত ও বৈধ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-সংসদের সদস্য বলে গণ্য হবেন। কেবল তারাই ভোটার বলে বিবেচিত হবেন এবং শিক্ষার্থী সংসদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে শর্তাবলি হচ্ছে, যেসব শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ৬ (৪+২) বছর অথবা স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ২ (১+১) বছর ধরে অধ্যয়ন করছেন, কেবল সেসব শিক্ষার্থীর নাম জাকসু ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন।
অন্যদিকে, গঠনতন্ত্রের ৮ ধারায় উল্লেখ আছে, বিশ্ববিদ্যালয় ও হলের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করা সাপেক্ষে সংসদে ও যে কোনো নিয়মিত সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও ভোট প্রদান করতে পারবেন।
অমর্ত্যের নেতৃত্বাধীন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অবৈধ এবং নিয়মবহির্ভূত। প্রথমে প্রকাশিত ভোটার তালিকায় এবং পরে চূড়ান্ত ভোটার ও প্রার্থী তালিকায়ও অমর্ত্য রায় জনের নাম ছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশন হঠাৎ করে তার প্রার্থিতা বাতিল করে। নির্বাচন কমিশনের এই পক্ষপাতদুষ্ট সিদ্ধান্ত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে বড় বাধা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ জাকসু নির্বাচনকে বানচাল করার একটি ষড়যন্ত্র।
আরও পড়ুন
- প্রার্থিতা ফিরে পেতে অমর্ত্য রায়ের রিট, শুনানি মঙ্গলবার
- ওএমআর ব্যালটে হবে জাকসুর ভোট
- জাকসু নির্বাচনে শিবিরের ৯ দফা ইশতেহার ঘোষণা
- জাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের প্যানেলের ইশতেহার ঘোষণা
তারা আরও দাবি করেন, ২০২৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মোছার দায়ে অমর্ত্য রায়কে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করেছিল তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে একই বছরের ২১ মার্চ হাইকোর্ট তাকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেন। কিন্তু ক্লাস, ল্যাব পরীক্ষা ও হলে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি। বহিষ্কারাদেশ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল ছিল। এরপর ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে অমর্ত্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। এর মাঝে পরীক্ষা শুরু হলেও ক্লাস করতে না পারায় তিনি চতুর্থ বর্ষের ৪০৮ নম্বর কোর্সের প্র্যাক্টিক্যাল পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান বলেন, ‘একাডেমিক কাউন্সিলের সুপারিশক্রমে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় অমর্ত্য রায় জনকে বিশেষ বিবেচনায় স্নাতকের ৪০৮ নম্বর কোর্সে পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়। তিনি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন।’
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শেষবার অকৃতকার্য হওয়ার আগে আরও দুইবার অমর্ত্য ওই কোর্সের পরীক্ষা দিয়েছেন। তবে বারবার অকৃতকার্য হওয়ায় তার নিয়মিত ছাত্রত্বের সুযোগ শেষ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমোদিত একটি নথি এই প্রতিনিধির হাতে এসেছে।
নথি থেকে জানা যায়, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায় জন স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ২০২১ সালের চতুর্থ পর্বের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ৪০৭ ও ৪০৮ নম্বর কোর্সে অকৃতকার্য হন। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালের চতুর্থ পর্বের ওই দুটি কোর্সে মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উভয় পরীক্ষায় পুনরায় অকৃতকার্য হন। পরে ২০২৩ সালের চতুর্থ বর্ষের ব্যাচের সঙ্গে ৪০৭ ও ৪০৮ নম্বর কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নিলে ৪০৮ নম্বর কোর্সে কৃতকার্য হতে পারেননি তিনি। পরে ওই কোর্সে বিশেষ পরীক্ষার সুযোগ প্রার্থনা করে আবেদন করেন অমর্ত্য। পাশাপাশি সবশেষ স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আবেদন করেন তিনি।
নথি থেকে আরও জানা যায়, সামগ্রিক বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল অমর্ত্য রায় জনের ২০২৩ সালের চতুর্থ পর্বের ৪০৭ ও ৪০৮ নম্বর কোর্সের সম্পন্নকৃত মানোন্নয়ন পরীক্ষাকে বিশেষ পরীক্ষা হিসেবে অনুমোদন এবং ৪০৮ নম্বর কোর্সে বিশেষ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করে। একইসঙ্গে ওই পরীক্ষায় পাস করা সাপেক্ষে এবং ২০২১-২০২২ শিক্ষাবর্ষে বিশেষ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার শর্তে তাকে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির অনুমতিদানের সুপারিশ করা হয়।
নিয়মিত শিক্ষার্থী না হলেও কীভাবে প্রার্থিতার ফরম নিয়েছেন জানতে চাইলে অমর্ত্য রায় বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন আমি কোনো স্টেটমেন্ট দিতে চাচ্ছি না।’
মো. রকিব হাসান প্রান্ত/এসআর