চট্টগ্রাম নগরের বাইজিদ এলাকায় সকাল ১০টা থেকে বিক্রি হয় টিসিবির পণ্য। বাজার থেকে না কিনে এখান থেকে নিলে সাশ্রয় হবে টাকা। তাই সকাল থেকে এই এলাকায় ভিড় জমান কয়েকশ মানুষ। দশটা বাজতেই এই সংখ্যা হয়ে যায় তিন শতাধিক।
তাদেরই একজন স্থানীয় একটি গার্মেন্টসের শ্রমিক পপি আক্তার। কালবেলাকে তিনি বলেন, ট্রাকে করে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিক্রি করছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবেন। সব মিলিয়ে এর জন্য গ্রাহককে দিতে হবে ৫৮৮ টাকা। দোকান থেকে এসব পণ্য কিনতে গেলে গুনতে হবে আরও বেশি টাকা। তাই সকাল থেকেই তিনি এসেছেন, দাঁড়িয়েছেন লাইনে।
শুধু পপি আক্তার নয়, তার মতো করে এসব পণ্য কিনতে লাইন ধরেছেন আরও ৩০০ মানুষ। কিন্তু টিসিবির পণ্য দেওয়া হবে মাত্র ২০০ জনকে।
টিসিবি, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, প্রতিদিন নগরীর ২০টি পয়েন্ট ধরে সপ্তাহের ছয়দিন মোট ১২০টি পয়েন্টে টিসিবি পণ্য বিক্রি করছে। এ হিসেবে প্রতিটি পয়েন্টে টিসিবি সপ্তাহে একবার করে পণ্য বিক্রি করছে। শুরুর দিকে কোথাও কোথাও ভিড় বেশি হলেও সপ্তাহখানেক পর সেটা কমে আসবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের জন্য এই বরাদ্দ থাকে। প্রতিদিন নগরের ২০টি পয়েন্টে প্রায় ৪ হাজার মানুষকে দেওয়া হচ্ছে এসব পণ্য। গত ১৩ দিনে নগরের ৫২ হাজার মানুষ পেয়েছেন এই পণ্য।
সরেজমিনে নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, ২০০ জনকে এসব পণ্য দেওয়া হলেও প্রতিটি ট্রাকের পেছনে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষের লম্বা লাইন। যে কারণে পণ্য নিতে না পেরে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন অর্ধেক মানুষ।
নগরীর চান্দগাঁও এলাকার একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের এক শিক্ষিকাও লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। আবার বেসরকারি বিমা কোম্পানিতে ‘এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করা প্রায় ৪৫ বছর বয়সী একজনের দেখা মিলেছে মেসার্স নূর আহমেদ এন্টারপ্রাইজের সামনে। উভয়ই জানালেন, বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, টিসিবির ন্যায্যমূল্যের পণ্য তাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। এ জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও পণ্য কিনতে মানুষের কষ্টবোধ হচ্ছে না।
জামালখান মোড়ে পণ্য কিনতে পেরে খুবই উচ্ছ্বসিত গৃহকর্মী রাবেয়া আক্তার। তিনি বলেন, বাজারে তো সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এখান থেকে নিলাম। ট্রাকে তেলের দাম কম। চিনি, ডালও খুবই কাজে লাগবে। ৫৮৭ টাকা দিয়ে যতগুলো পণ্য কিনলাম, বাজার থেকে কিনলে ডবল লাগত।
নগরীর বহদ্দারহাট ও বাকলিয়া এলাকায় টিসিবির পণ্যের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে আসা কেউ কেউ ভোরেই এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই টিসিবির পণ্য কিনছেন, এমন নয়। ক্ষুদ্র-মাঝারি দোকানি, রিকশা-অটোরিকশার চালক, কারখানার শ্রমিক, আবার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্কুলশিক্ষক, বিভিন্ন ছোটখাট বেসরকারি কিংবা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও দেখা গেছে লাইনে।
টিসিবি, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষ খুবই উৎসাহ নিয়ে টিসিবির পণ্য কিনছেন। কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পণ্য আমরা ট্রাকে দিচ্ছি, লাইনে দাঁড়ানো সবাই পাচ্ছে। আমাদের কাছে পণ্যের মজুতও পর্যাপ্ত আছে। যেসব এলাকায় মানুষের উপস্থিতি বেশি সেসব এলাকায় অনেক সময় দুবারও এসব পণ্য দেওয়া হচ্ছে।