বাসা ছেড়ে দিতে চাওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) নিবেদীকা জাহান নামে এক নারী শিক্ষার্থীকে দরজা আটকিয়ে মারধরের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বাসা মালিকের স্ত্রীর বিরুদ্ধে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর নীলক্ষেতের বিসিএস স্টাফ কোয়ার্টারের করতোয়া ভবনের পাঁচ তলায় আজাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির ফ্ল্যাটে এ ঘটনাটি ঘটান তার স্ত্রী। এ সময় মারধর করতে না পারলেও ভুক্তভোগীর আসবাবপত্র ভেঙে ফেলে অভিযুক্ত।
ঘটনার সময় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’ নামে ফেসবুক গ্রুপে জানিয়ে পোস্ট করে লেখেন, ‘প্লিজ হেল্প মি, জীবননাশের আশঙ্কায় আমি। নীলক্ষেত বিসিএস স্টাফ কোয়ার্টার। করতোয়া বিল্ডিংয়ের পাঁচতলায়। আজাদ হোসেনের বাসায়।’
এর পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী গিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিউ মার্কেট থানার পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ বাড়িওয়ালা আজাদ হোসেনকে থানায় নিয়ে আসেন। পরে তিনি ও তার স্ত্রীর মাধ্যমে ভবিষ্যতে কোনোদিন কোনো ভাড়াটিয়া হয়রানির শিকার হবে না বলে মুচলেকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এসময় তিনি জানান, তার স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ।
আজাদ হোসেনের মুচলেকায় বলা হয়, আমি (আজাদ হোসেন) এবং আমার স্ত্রী কোনো ভাড়াটিয়ার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করব না। যদি করি তাহলে যে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধা থাকিবে না।
এ দিকে ঘটনার বর্ণনায় এক ঢাবি শিক্ষার্থী সৈয়দ ইব্রাহিম খলিল বলেন, আজাদ নামে একজন সরকারি ড্রাইভারের কোয়ার্টারে ওনার ফ্যামিলিসহ ঢাবির আরও ছয়জন আপু থাকতেন। সম্প্রতি ভুক্তভোগী নিবেদীকা আপুর বিয়ে হয়েছে। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই উনি নতুন বাসায় চলে যাবেন। সেজন্য উনি আজাদ সাহেবকে জানিয়েছেন বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা। আর এই কথা শুনেই না কি আজাদ সাহেবের স্ত্রী মারমুখী আচরণ শুরু করে দিয়েছেন। আপুর জিনিসপত্র সব ভেঙে বাইরে ফেলে দিয়েছেন। এমনকি আপুকে মারতে পর্যন্ত আসছেন। এ সময় আপু শিক্ষার্থী সংসদে পোস্টটি করেন। সেটা দেখে আমি, আরিফ আর রেজওয়ান আহনেদ রিফাত তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে যাই। আগেই পুলিশকে কল করা হয়েছিল। আমরা যাওয়ার ১০ মিনিট পরে পুলিশ আসে নিউমার্কেট থানা থেকে। আপাতত পুলিশ আজাদ হোসেনের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়েছেন, কোনো প্রকার মামলা করা হয়নি।
ইসলামিক স্টাফিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এবি যুবাইর বলেন, আমি ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় গ্রুপে একটা স্ট্যাটাস দেখলাম, নীলক্ষেতের বিসিএস কোয়ার্টারের করতোয়া বিল্ডিংয়ের পাঁচতলায় তিনি না কি প্রাণ নাশের আশঙ্কা করছেন। এটা শুনে সেখানে আমি ও আমার বন্ধুরা দৌড়ে যাই। গিয়ে দেখি বাসায় উলটপালট অবস্থা ও অনেক লোকের সমাগম। আমি জানতে পারলাম ওই আপু ওই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তিনি না কি কয়েকদিন বাসায় ছিলেন না। তার হাজব্যান্ড ময়মনসিংহে আছেন। যিনি বাসা ভাড়া দিয়েছেন তার স্ত্রী ওই আপুর রুমের দরজা আটকে মারধরের চেষ্টা করলে, তিনি ভয় পেয়ে তা গ্রুপে জানিয়ে পোস্ট করেন। তবে ওই বাসাওয়ালা বললেন, তার স্ত্রীর না কি মাথায় সমস্যা। পরে নিউমার্কেট থানায় কল দিয়ে ওই লোককে পুলিশের কাছে তুলে দিয়ে আমি চলে এসেছি।
ঢাবি শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে ভুক্তভোগী নিবেদীকা জাহান ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেন, এবি জুবায়ের ভাই এসেছেন এবং অনেকগুলো ভাই-আপু এসেছেন। এখন আর কোনো সমস্যা নেই।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. মুহা. রফিকুল ইসলাম কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের প্রক্টরিয়াল মোবাইল টিম ও শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। নিউমার্কেট থানা থেকে পুলিশও দ্রুত রেসপন্স করেছে। অভিযুক্তের পক্ষ থেকে পুলিশ মুচলেকা নিয়েছেন।