ফরিদপুর ভূমি অফিসে প্রকাশ্যেই চলে ঘুস লেনদেন

20 hours ago 2

ফরিদপুর জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রকাশ্যে চলে ঘুস লেনদেন। দলিল রেজিস্ট্রি, জেলা ও উপাজেলা পর্যায়ের জমির নকলসহ রেকর্ড রুম থেকে জমি-জমার কাগজপত্র পেতে হলে ঘুস ছাড়া কোনো কাজই হয় না এখানে।

রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের রেকর্ড হেফাজতখানার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির নানা অভিযোগ। রয়েছে ভুয়া দলিল তৈরি করার অভিযোগও। সম্প্রতি ঘুস গ্রহণের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ঘুস লেনদেনের ভিডিও ও বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগীর অভিযোগ, রেকর্ড অফিসের কর্মকর্তা মো. মাসুদ আলী মোল্লা নেতৃত্বে ১০-১২ জন দালাল চক্র রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তৃতীয় তালায় রেকর্ড অফিসে ঘোরাঘুরি করেন। গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল লোকজন কাজের জন্য আসলে সেবা প্রত্যাশীদের নিকট থেকে চুক্তিতে টাকা নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। চক্রটি টাকা নেওয়ার পরও কাজ না করে আরও অতিরিক্ত টাকা দাবি করে দিনের পর দিন ঘুরাতে থাকেন। এ ঘটনার মূল নায়ক মাসুদ আলী মোল্লা।

ফরিদপুর ভূমি অফিসে প্রকাশ্যেই চলে ঘুস লেনদেন

অভিযোগ রয়েছে, মাসুদ আলী মোল্লা ভাঙ্গা উপজেলা মানিকদাহ ইউনিয়নের জাহানপুর গ্রামের সুলতান মোল্যার ছেলে। গ্রামের লোকজনের কাছে তিনি মো. শাহাবুদ্দীন মোল্যা নামে পরিচিত। তিনি ২০-২৫ বছর আগে মানিকদহ ইউনিয়ন পরিষদ হতে চেয়ারম্যান পদে মোমবাতি মার্কা নিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। বর্তমানে তার নাম মাসুদ আলী মোল্লা কীভাবে হলো এলাকাবাসীর বোধগম্য নয়। তিনি রেকর্ড রুমে চাকরির সুবাদে গ্রামে অন্তত দুই কোটি টাকা মূল্যের আলিশান রাজপ্রাসাদ তৈরি করেছেন।

ভাইরাল হওয়া ভিডিতে দেখা যায়, প্রকাশ্যে ঘুসের টাকা নিচ্ছেন ফরিদপুরের রেকর্ড কিপার বা নকল নবীশ মো. মাসুদ আলী মোল্লা। একটি জমির নকল উঠাতে দিনের পর দিন ঘুরার পর টাকা দিয়ে নকল উঠাতে বাধ্য হচ্ছেন গ্রাহকরা। অনিয়মের মাধ্যমে ১৯৬৮ সালের শরিয়তপুর জেলার একটি ভুয়া দলিলের নকল উঠিয়ে দিয়ে প্রকৃত জমির মালিক ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। এমন ধরনের নানা অভিযোগ উঠেছে ওই রেকর্ড কিপারের বিরুদ্ধে।

শরিয়তপুরের জাজিরা এলাকার ভুক্তভোগী মো. রাজিব মিয়া অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেলা ও সদর সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের জমি রেজিস্ট্রি, মূল দলিল উত্তোলন, বৃহত্তর ফরিদপুরের পাঁচ জেলার বহু পুরাতন দলিলের নকলসহ যে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তরের সব তথ্য সংগ্রহ ও সরবরাহ করা হয় এ অফিস থেকে।’

ফরিদপুর ভূমি অফিসে প্রকাশ্যেই চলে ঘুস লেনদেন

ভাঙ্গা পৌর সদরের মো. আব্দুল মান্নান মোল্লা অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘তিন দফা ঘুসের টাকা দেবার পরও কাঙ্ক্ষিত সেবাটি না পেয়ে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়। সেবা না পেয়ে বাধ্য হয়ে ঘুসের টাকা দেবার দৃশ্য গোপনে ভিডিও করি।’

এ বিষয়ে ঘুস গ্রহণকারী রেকর্ড রক্ষক মাসুদ মোল্লা বলেন, ভুয়া সদন দিয়ে রেকর্ড কিপার বা নকল নবীশের চাকুরি করার অভিযোগ সঠিক নয়। প্রকাশ্যে ঘুসের টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন, আমি টাকা নিতে চাইনি, তিনি জোর করে আমাকে টাকা দিয়েছেন। এলাকায় শাহাবুদ্দীন মোল্যা নামে পরিচিত হলেও অফিসে মাসুদ মোল্লা নামে তিনি পরিচিত। আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

ফরিদপুর ভূমি অফিসে প্রকাশ্যেই চলে ঘুস লেনদেন

জানতে চাইলে ফরিদপুর সদর সাব রেজিস্ট্রার মিনতী দাস বলেন, ‘ফেসবুকে ও বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচারিত ভিডিওতে রেকর্ড কিপার মাসুদের টাকা নেওয়ার দৃশ্যটি দেখে তিন কার্যদিবসের মধ্যে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।’

ফরিদপুর জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রফেসর সুলতান মাহমুদ হীরক বলেন, ‘ফরিদপুরের নয়টি উপজেলাসহ ৮১টি ইউনিয়ন ভুমি অফিস থেকে ভূমি সংক্রান্ত বহু সেবা নিতে আসা সাধারণ নাগরিক দুর্নীতি ও হয়রানীমুক্ত সেবা পাবে, এমনটিই প্রত্যাশা করি।’

বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুর জেলা রেজিস্ট্রার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভুয়া সদন দিয়ে রেকর্ড কিপার বা নকল নবীশের চাকরি প্রাপ্তির বিষয়সহ প্রকাশ্যে ঘুস লেনদেনের অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এন কে বি নয়ন/আরএইচ/জেআইএম

Read Entire Article