নারীদের মধ্যে ক্যানসারে মৃত্যুর অন্যতম কারণ স্তন ক্যানসার। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি ব্যথাহীন এবং উপসর্গহীন থাকায় ধরা পড়তেই অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। তবে নিয়মিত নিজেই বাড়িতে নিজের স্তন পরীক্ষা করলে যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন দ্রুত বোঝা যায়।
অক্টোবর মাস স্তন ক্যানসার সচেতনতা মাস। ক্যানসার প্রাণাঘাতী রোগ হলেও আগেভাগে ধরা পড়লে স্তন ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। তবে এজন্য প্রয়োজন সচেতনতা এবং নিয়মিত নিজের স্তন পরীক্ষা করা, যাকে বলা হয় ব্রেস্ট সেলফ এক্সামিনেশন বা সেলফ স্ক্রিনিং।
প্রতি মাসে একবার সেলফ স্ক্রিনিং করা উচিত। মাসিক বা পিরিয়ড চলাকালীন হরমোনের প্রভাবে স্তন ফুলে যেতে পারে, তাই পরীক্ষা করার সবচেয়ে ভালো সময় হলো পিরিয়ড শেষ হওয়ার তিন থেকে পাঁচ দিন পর। যারা মেনোপজে গেছেন, তারা মাসের নির্দিষ্ট একটি দিন ঠিক করে নিতে পারেন।
এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে নিজে নিজে এই পরীক্ষা করবেন-
১. ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দুই হাত পাশে রাখুন, তারপর মাথার ওপরে তুলুন। স্তনের আকার, রঙ, ত্বকের ভাঁজ বা দাগে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি না দেখুন। স্তনের চারপাশে বা নিপলে কোনো ফোলা বা ভেতরে ঢোকা অংশ আছে কি না লক্ষ্য করুন।
২. হাতে দিয়ে স্পর্শ করে দেখুন
এক হাত মাথার ওপরে রেখে অপর হাত দিয়ে বিপরীত দিকের স্তনটি আলতোভাবে চাপ দিন। আঙুলের ডগা দিয়ে বৃত্তাকারে পুরো স্তনটি ঘুরে ঘুরে পরীক্ষা করুন—উপরে, নিচে, পাশ থেকে পাশ পর্যন্ত। একইভাবে অন্য স্তনটিও পরীক্ষা করুন।
খেয়াল করুন কোনো গোটা, বা ফোলা আছে কিনা।
৩. শুয়ে পরীক্ষা করুন
শোওয়ার সময় এক পাশের কাঁধের নিচে বালিশ রাখুন। বিপরীত হাত দিয়ে স্তনটি বৃত্তাকারে স্পর্শ করুন, কোনো শক্ত গাঁট বা অস্বাভাবিক কিছু অনুভব করছেন কি না দেখুন।
৪. নিপল পরীক্ষা করুন
হালকা চাপে কোনো রস, রক্ত বা তরল বের হচ্ছে কি না লক্ষ্য করুন।
যে লক্ষণগুলো দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাবেন
- স্তনে শক্ত গাঁট বা ফোলা অংশ
- নিপল থেকে অস্বাভাবিক তরল নিঃসরণ
- স্তনের ত্বকে ভাঁজ বা দাগ
- স্তনের আকৃতি বা রঙে পরিবর্তন
সেলফ স্ক্রিনিং ক্যানসার প্রতিরোধ করে না, তবে এটি প্রাথমিক শনাক্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিয়মিত পরীক্ষা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং ধূমপান থেকে বিরত থাকলে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক কমানো সম্ভব।
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ন্যাশনাল ব্রেস্ট ক্যানসার ফাউন্ডেশন, ব্রেস্ট ক্যানসার রিসার্চ ফাউন্ডেশন
এএমপি/জিকেএস