• সিএসই বিভাগে চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষের ৪ দিন পার হয়েছে।
• নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে কাকে নিযুক্ত করা হবে এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্ধ।
• ইতিমধ্যে দুই দফা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন অধ্যাপক ড. নাসির।
• চেয়ারম্যান না থাকায় অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে বিভাগটি।
• ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে বলা আছে, প্রতি তিন বছর পর পালাক্রমে বিভাগের অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করবেন উপাচার্য। সিএসই বিভাগে চেয়ারম্যান পদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ইতিমধ্যে চার দিন পার হয়েছে। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বিভাগটিতে কাউকে নতুন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিতে পারছে না প্রশাসন।
নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে কাকে নিযুক্ত করা হবে এ নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্ধ দেখা দিয়েছে। এতে বিভাগটি এক প্রকার অভিভাবকহীন হয়ে পড়ায় ব্যাহত হচ্ছে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম। ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিনকে সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান করতে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন সংগঠনের নেতারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিগত দিনে বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান নিয়োগের যে নজির রয়েছে, তাতে অধ্যাপক নাসিরকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক। তাদের মতে, বিভাগে যদি অধ্যাপক সংকট থাকে তাহলে যে কয়জন অধ্যাপক রয়েছেন, তাদের মধ্য থেকেই পালাক্রমে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হবে। আবার বিভাগের শিক্ষকদের মধ্য থেকে কেউ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলেই বিদ্যমান চেয়ারম্যানের মেয়াদ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন অধ্যাপকদের মধ্য থেকে রোটেশন অনুযায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ দিতে হবে।
ঠিক এ ধারার চর্চাই বিগত দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অব্যাহত রয়েছে। খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের বিভাগেও এরকম নজির রয়েছে। নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শুরুর দিকে দুইজন অধ্যাপক ছিলেন। তারা হলেন বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম ও বর্তমান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মোস্তফা হাসান। ড. রেজাউল করিম সিনিয়র হওয়ায় প্রথমে তিনি এবং পরবর্তীতে ড. মোস্তফা হাসান বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তারা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থাকাকালীন বিভাগে নতুন কোনো অধ্যাপক না হওয়ায় পুনরায় চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। তার এ মেয়াদে বিভাগে নতুন দুইজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তারা হলেন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন ও অধ্যাপক ড. আনোয়ার। ড. রেজাউল করিমের পরে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া ড. আবুল হোসেন। সমাজকর্ম বিভাগের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগেও চেয়ারম্যান নিয়োগের এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে জবির সিএসই বিভাগে বিগত দিনে অধ্যাপক হিসেবে ছিলেন মাত্র দুজনই। তারা হলেন ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য ও ড. নাসির উদ্দিন। অন্য অধ্যাপক না থাকায় এতদিন তারা রোটেশন অনুযায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। এর মধ্যে ড. উজ্জ্বল কুমার আচার্য তিন মেয়াদে এবং ড. নাসির উদ্দিন দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে এ বিভাগে নতুন করে তিনজন শিক্ষক অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেনে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও বিভিন্ন বিভাগে প্রচলিত রোটেশন পদ্ধতি অনুযায়ী, সর্বশেষ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর নতুন অধ্যাপকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগের চেয়ারম্যান হওয়ার কথা। তবে এখানেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সাদা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন। দুইবার চেয়ারম্যান হওয়ার পরও নতুন অধ্যাপকদের বাদ দিয়ে তৃতীয়বার চেয়ারম্যান হতে চাইছেন তিনি। এতে চেয়ারম্যান নিয়োগ আটকে গেছে।
এ বিষয়ে কথা হলে কম্পিউটার সাইন্স ও ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন ইতিমধ্যে দুই দফায় বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বর্তমানে বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে তিনজনের পদোন্নতির বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন তিনি। তবে ড. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন দাবি করেন, নিয়মানুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রমে তিনিই চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাবেন।
সিএসই বিভাগে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগে জটিলতার বিষয়টি স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, বিভিন্ন বিভাগে চেয়ারম্যান নিয়োগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্যানেলে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে একটা আইনি সিদ্ধান্ত পাওয়ার অপেক্ষায় আছি। যিনি চেয়ারম্যান পদ দাবি করছেন, তারও একটা যুক্তি আছে। সবকিছুর আইনি দিক যাচাই করে আমরা নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেব।
টিএইচকিউ/এমএমকে/জিকেএস