বিশ্বপ্রাণের তূর্যবাদক

3 months ago 39

যখন মামুলি আনন্দের অভ্যাসে আমাদের জীবন হয়ে ওঠে
নিস্তরঙ্গ জলাশয়, বেড়ে ওঠে শ্যাওলা, জমে ওঠে বালি,
নজরুল, তখন তুমি আসো হয়ে দুরন্ত কালবোশেখির ঝড়
আমরা নব আনন্দে গেয়ে উঠি:
‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর! তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়!!’

যখন জাতপাত আর ধর্মের দ্বন্দ্বে মূঢ় আমরা উন্মত্ত
বিজ্ঞান ও বৈশ্বায়নের আলো ঘোচাতে পারে নাকো
বিভাজিত মনের জটিল অন্ধকার,
এশিয়ায়, ইউরোপে, আফ্রিকায়—রক্তে রেঙে ওঠে
সম্প্রীতির আলপনা আঁকা ঐতিহাসিক জনপদ,
হে মহান প্রাণের রাষ্ট্রদূত,—হে বিশ্বমানব,
তখন তুমি শোনাও অভেদ মানবতার অমেয়বাণী:
‘গাহি সাম্যের গান
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান,
যেখানে মিশেছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুসলিম-ক্রীশ্চান।’

যখন নিত্যনতুন বৈষম্যের কারাগারে বন্দী হয়ে পড়ে নারী
অভিচারী রঙের জাগলারি গুলিয়ে দেয় তার আত্মার ঠিকানা
সে নিজেও ভুলতে বসে—সে কে, আর কীইবা তার স্বপ্ন,
তখন তুমি তাকে আবারো শোনাও আত্ম-জাগরণের বাণী:
‘বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’
‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা’—
তোমার এই অগ্মিমন্ত্র কণ্ঠে নিয়ে পুনরায় স্বরূপে জেগে ওঠে নারী।

নতুন দাসত্বে জড়িয়ে যখন আমরা শক্তিসমুদ্রে থেকেও
শক্তিহীন হয়ে পড়ি, যখন আমাদের প্রভু অনেক,
আত্মবিশ্বাস হারিয়ে আমরা আমজনতা আত্মপরিচয়হারা,
তখন—‘বলো বীর, চির-উন্নত মম শির
শির নেহারি আমারি নত শির ঐ শিখর হিমাদ্রীর!’
—বলে জাগিয়ে দাও আমাদের;
প্রত্যাবৃত্ত আত্মবিশ্বাসে আমরা সমস্বরে বলে উঠি
‘আমি সহসা আমারে চিনেছি, আমার খুলিয়া গিয়াছে সব বাঁধ।’

সেই কবে বিস্তারিত হাতে তুমি গানের প্রাণে বেঁধে দিয়েছো
পল্লিবালার চুড়ির নিক্কণ,
উম্মে কুলসুমের কণ্ঠের জোয়ার,
আটলান্টিকের ঢেউ,
পারসিয়ান বুলবুলির রাতের কান্না,
এবং সরস্বতী-ভোরের অনুদ্ধত হাসি;

মুষ্টিমেয়তার বৃত্ত ভেঙে এবং
গোষ্ঠীতন্ত্রের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে
সেইদিন থেকে—
গান হয়ে উঠেছে সকলের,—কবিতা হয়ে উঠেছে সবার।

এসইউ/জেআইএম

Read Entire Article