ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক রেজোয়ান পেলেন ‘ইয়েল বিশ্ব ফেলো’

2 days ago 12

চলনবিলের ভাসমান স্কুলের উদ্ভাবক স্থপতি মোহাম্মদ রেজোয়ান ২০২৫ সালের ‘ইয়েল বিশ্ব ফেলো’ নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি এই লিডারশিপ ফেলোশিপ প্রদান করে। এটি বিশ্বের অন্যতম প্রতিযোগিতামূলক ও মর্যাদাপূর্ণ ফেলোশিপ প্রোগ্রামগুলোর অন্যতম।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) মোহাম্মদ রেজোয়ানের প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর বিশ্বের ৪ হাজার ২০০ জনের বেশি মনোনীত প্রার্থীর মধ্যে থেকে ১৬ জন ইয়েল বিশ্ব ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিতরা শাসন ব্যবস্থা, জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যবসা, গণমাধ্যম, আইন, প্রযুক্তি ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তাদের মধ্যে মাত্র তিনজন অলাভজনক সংস্থায় (এনজিও) কাজ করেন।

রেজোয়ান ছাড়াও ২০২৫ সালের ফেলোদের মধ্যে সুইডেনের পরিবেশবান্ধব ব্যবসার প্রবক্তা ম্যাথিয়াস উইকস্ট্রম, জর্জিয়ার সাবেক সংসদ ভাইস স্পিকার ও গণতন্ত্র বিশেষজ্ঞ তামার চুগোশভিলি, নাইজেরিয়ার বিশ্ববিখ্যাত সংগীতশিল্পী বুকোলা এলেমিদে (আসা), মিসরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মারিয়াম এল মারাকেশি এবং প্যারাগুয়ের শীর্ষস্থানীয় বিচার বিভাগীয় ব্যক্তিত্ব ভিভিয়ান নুনেজ উল্লেখযোগ্য।

‘ইয়েল বিশ্ব ফেলো’ চার মাসের একটি পূর্ণকালীন রেসিডেনসিয়াল প্রোগ্রাম, যা ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টার থেকে পরিচালিত হয়।

স্থপতি রেজোয়ান চলনবিলের এমন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে উঠেছেন, যেখানে বন্যার কারণে প্রতিবছর স্কুল বন্ধ হয়ে যেত, মানুষের জীবিকা অনিশ্চিত হতো। বাধাগ্রস্ত হতো মৌলিক সেবাগুলোও। কিন্তু তিনি এগুলো সংকট হিসেবে দেখেননি; বরং এসবের মাঝেই নতুন সমাধানের পথ খুঁজেছেন। তার প্রতিষ্ঠান সিধুলাই স্ব-নির্ভর সংস্থা ২০০২ সালে বিশ্বের প্রথম ভাসমান স্কুলের ধারণা বাস্তবায়ন করে। সৌরবিদ্যুৎ চালিত নৌকায় পরিচালিত এসব স্কুল বন্যার মধ্যেও শিশুদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করে।

শুধু শিক্ষা নয়, রেজোয়ানের উদ্যোগে সম্প্রসারিত হয়েছে ভাসমান গ্রন্থাগার, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র, প্রশিক্ষণকেন্দ্র, প্লে-গ্রাউন্ড ও ভাসমান কৃষি খামারের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সরকার তার উদ্ভাবনকে (ভাসমান স্কুল) জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় (২০২৩-২০৫০) অন্তর্ভুক্ত করেছে। তার উদ্ভাবনী মডেল এখন পর্যন্ত এশিয়া ও আফ্রিকার আটটি দেশে অনুসরণ করা হয়েছে।

বিশ্ব ফেলো রেজোয়ান ইয়েল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফল সেমিস্টারে (আগস্ট-ডিসেম্বর) লেকচার ও পরামর্শ দেবেন। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও শিক্ষা উন্নয়নবিষয়ক আলোচনায় অংশ নেবেন, গবেষণামূলক কাজ করবেন এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরবেন।

মোহাম্মদ রেজোয়ান বলেন, এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের সব সংগ্রামী মানুষের জন্য, যারা আমাদের প্রতিনিয়ত অনুপ্রাণিত করেছেন। তাদের প্রেরণাতেই আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি, নতুন সমাধান বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকেই আসতে পারে।

২০০২ সালে শুরু হওয়া মরিস আর গ্রিনবার্গ বিশ্ব ফেলো প্রোগ্রাম ইয়েল ইউনিভার্সিটির ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ সেন্টারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। এটি একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম, যা ভবিষ্যতের প্রভাবশালী নেতাদের স্বীকৃতি দেয়। এই ফেলোশিপে অংশগ্রহণকারীদের অনেকেই পরবর্তী সময় হয়ে উঠেছেন বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। যেমন— রাশিয়ার দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের নেতা আলেক্সেই নাভালনি, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান, লিচেনস্টাইনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাটরিন এগেনবার্গার।

Read Entire Article